কলকাতা: পোয়েটিক জাস্টিস বোধ হয় একেই বলে।
গত মরসুম পর্যন্ত যিনি ছিলেন বাংলার অধিনায়ক, তিনি যে শুধু নেতৃত্ব হারালেন তাই নয়, বাদ পড়লেন দল থেকেই। সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টির জন্য বাংলা দলে অনুষ্টুপ মজুমদারকে (Anustup Majumdar) দেখতে না পেয়ে হতবাক হয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। নির্বাচকমণ্ডলী যুক্তি দেখিয়েছিল, রঞ্জি ট্রফির জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে অনুষ্টুপকে। নতুন ছেলেদের সুযোগ দিতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত।
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে নতুনদের সুযোগ দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল বাংলা।
একইরকম হতে চলেছিল বিজয় হাজারে ট্রফির (Vijay Hazare Trophy) অভিযানও। যে টুর্নামেন্টে অনুষ্টুপকে দলে ফেরানো হয়। কিন্তু প্রথম তিন ম্যাচে মাঠের বাইরেই কাটান চন্দননগরের ব্যাটার। রবিবার শেষ পর্যন্ত তাঁকে যখন সুযোগ দেওয়া হল, ঘরোয়া ওয়ান ডে টুর্নামেন্টের নক আউটের দৌড়ে টিকে থাকতে জিততেই হবে বাংলাকে। প্রতিপক্ষ মুম্বই। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্যের নিরিখে যাদের দৈত্য বললেও খুব একটা ভুল হবে না।
অনুষ্টুপ যখন ব্যাট করতে নামলেন, ২৭ রানের মধ্যে অধিনায়ককে হারিয়ে প্রবল চাপে বাংলা। ১২২ বলে ১১০ রান করে যখন আউট হলেন, ৩৯.৪ ওভারে ২২১ রানের মখমলের ওপর বসে বাংলা। তিনশো নাগালের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত তিনশো পার করল বাংলার ইনিংস। মুম্বইকে ৬৭ রানে হারিয়ে নক আউটের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল বাংলা। ব্রাত্য অনুষ্টুপ আর তরুণ শাহবাজ আমেদের ব্যাটে ভর করে।
প্রত্যাবর্তনেই দুরন্ত সেঞ্চুরি করলেন বাংলার অভিজ্ঞ ব্যাটার। নির্বাচকদের জবাব? নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করলেন? তিরুঅনন্তপুরম থেকে এবিপি আনন্দকে অনুষ্টুপ বললেন, 'এতদিন খেলার পর আর প্রমাণ করার কী আছে! দল আমার থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। আমি জানি দল আমার কাছে কী চায়। আগের মরসুমেও খেলেছি, রান করেছি। তারপর বাদ পড়েছি। আমাকে খেলাবে কী খেলাবে না, সেটা আমার হাতে নেই। আমার হাতে খেলা আছে। সেটাই করছি।'
সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ না পেয়ে বা বিজয় হাজারে ট্রফির প্রথম তিন ম্যাচে মাঠের বাইরে কাটানোর সময় হতাশা গ্রাস করেনি? 'হতাশা কিছু নয়। আমার সঙ্গে আগেও এরকম হয়েছে। নিজেকে তৈরি রেখেছিলাম। যাতে সুযোগ পেলেই কাজে লাগাতে পারি। সেটা পেরেছি বলে ভাল লাগছে। অবসাদ গ্রাস করেনি,' বলছিলেন ৩৮ ছুঁই ছুঁই ব্যাটার। যোগ করলেন, 'অনেকের ভালবাসা পেয়েছি। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ, সমর্থন করার জন্য। দলের প্রয়োজনের সময় সেঞ্চুরি পেয়েছি। ঘরোয়া ক্রিকেটে এই মরসুমে প্রথম ম্যাচ খেললাম। সেঞ্চুরি করে ভাল লাগছে। এই ছন্দ বজায় রাখতে হবে।'
বলা হয়, ঘরোয়া ক্রিকেটে যদি সকলের নজর কাড়তে চাও, তো মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রান করো। অনুষ্টুপ সেটাই করেছেন। সূর্যকুমার যাদবদের বিরুদ্ধে ঝকঝকে সেঞ্চুরি। যে ইনিংস দেখে বাংলার কোচ অরুণ লাল পর্যন্ত বলে ফেলেছেন, 'দুবছর আগের অনুষ্টুপকে ফিরে পেলাম যেন। দুর্দান্ত।'
দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েও নির্লিপ্ত থাকছেন অনুষ্টুপ। তাঁর পাখির চোখ মঙ্গলবারের কর্নাটক ম্যাচ। বলছেন, 'কর্নাটকের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচ। জিততেই হবে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের মাঠে খেলা। এই মাঠটায় আগে খেলিনি। মাঠ ও পিচের পরিস্থিতি দেখে কৌশল ঠিক করতে হবে। আমাদের দলে ভাল মানের পেসার ও স্পিনার রয়েছে। ওপরের দিকের ব্যাটাররা বড় রান করলে সবই সম্ভব।'
আরও পড়ুন: টিম ইন্ডিয়ার দায়িত্ব সামলেও জুনিয়র দলের ক্লাস, কোচিংয়ে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন দ্রাবিড়
চল্লিশের মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া, চৌত্রিশের রোহিত শর্মার মাথায় জাতীয় দলের নেতৃত্বের মুকুট ওঠা, আটত্রিশের দোরগোড়ায় থাকা অনুষ্টুপের নাটকীয় প্রত্যাবর্তন, ভারতীয় ক্রিকেটে যেন নতুন রিংটোন হয়ে গিয়েছে। যাতে বাজছে, বয়স নেহাতই একটা সংখ্যা।