নয়াদিল্লি: ৫৩১ মিনিট...৩০৯ রান..  ৩৭৫ বল ..৩৯টি বাউন্ডারি ও ৬টি ছক্কা


স্মৃতিটা ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে আজও ভীষণভাবে টাটকা। ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ, পাকিস্তানের মাটিতে তরুণ এক ব্যাটারের বীরত্বের কাহিনি। চোখে চোখে রেখে আগুনে পেস বোলিং নিয়ে ছেলেখেলা। যার গভীরতা এতটাই ছিল যে ওই সিরিজের পরই বছর ২৬-এর সেই তরুণের নামকরণ হয়ে গেল 'নজফগড়ের নবাব'। প্রথম ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ত্রিশতরানের মালিক হওয়া। পাঠকরা এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন যে কোন ম্যাচের কথা হচ্ছে। হ্যাঁ, মুলতানে ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করা ৩০৯ রানের ইনিংসটি নিয়েই আজকের ''ওস্তাদের মার...'' সিরিজের আমাদের প্রতিবেদন।


১৫ বছর পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর। ১৯৮৯ সালে শেষবার সচিন তেন্ডুলকরের অভিষেকের সময় ২ দেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তানের মাটিতে মুখোমুখি হয়েছিল। ততদিনে ১১২ টি টেস্ট খেলে ফেলেছেন সচিন। স্বভাবতই শোয়েব, রজ্জাকদের পেস বোলিংয়ের সামনে সচিনই সঞ্জীবনী ছিল টিম রাহুলের ব্যাটিং বিভাগে।  কিন্তু সচিন নয়, সেই সিরিজ পেয়ে গেল বীরেন্দ্র সহবাগ নামের এক তরুণ ভারতীয় ওপেনারকে। যার ব্যাটিংয়ের সামনে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেলেন তাবড় তাবড় পাক বোলাররা। 


মুলতানে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলতে নেমেই বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের ছাপ ফেললেন সহবাগ। আকাশ চোপড়ার সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে ১৬০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছিলেন। এরপর সচিনের সঙ্গেও ৩৩৬ রানের পাহাড়প্রমাণ পার্টনারশিপ। শোয়েব, সামি, রজ্জাক মিলে তখনও পাকিস্তান পেস বোলিংয়ের ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলেছেন বিশ্ব ক্রিকেটে। তাঁদের বিরুদ্ধেই কুছ পরোয়া নেহি মনোভাবে ব্যাট চালালেন সহবাগ। 


টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্ম তখনও হয়নি। কিন্তু ম্যারাথন ইনিংস খেলার পথে টি-টোয়েন্টির মেজাজেই যেন ব্যাট চালালেন সহবাগ। উল্টোদিকে নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা সচিনও থামাতে পারছিলেন না তাঁকে। সচিন বারবার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলে এসেছেন যে, তাড়াতাড়ি রান তোলার তাগিদে নিজের উইকেট খোয়াতেন সহবাগ। সেদিনও অনেকটা তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ১৯৪- থেকে ছক্কা হাঁকিয়ে দুশোয় পৌঁছেছিলেন বীরু। এরপর ২৯৪-এ থাকাকালীন সচিন ধীরে সুস্থে খেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর জুনিয়রকে। শুধু তাইই নয়, তিনি এমনও বলেছিলেন যে যদি ছক্কা হাঁকাতে যান সহবাগ, তবে তাঁকে ব্যাট দিয়ে মারবেন। মুচকি হেসে সহবাগ জানিয়েছিলেন যে সাকলিন মুস্তাক আক্রমণে এলে তাঁকে ছক্কা হাঁকাবেন। 


আর হলও তাই, মুস্তাক আক্রমণে এসেছিলেন। ওভারের প্রথম ২টো বল সচিন নিজে খেলেছিলেন। তৃতীয় বলে স্ট্রাইকে ছিলেন সহবাগ। সচিন তাঁকে সিঙ্গলসে খেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। চতুর্থ বলে রান না নিলেও পঞ্চম বলে স্টেপ আউট করে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে বল ফেলেন দিল্লির তারকা ক্রিকেটার। 


সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ৬৭৫ রান বোর্ডে তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয় ভারত। ১৯৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সচিন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৪০৭ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ফলো অনের লজ্জা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২১৬ রানই বোর্ডে তুলতে পারে তারা। এরই সঙ্গে ইনিংস ও ৫২ রানে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। প্রত্যাশমতোই ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন সহবাগ। 


সেই ম্যাচের কথা প্রসঙ্গে পরে ইনজামাম উল হক বলেছিলেন, ''আমি একটা সময় বীরুকে আটকাব কেমন করে, তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেই সময় ওঁ আমাকে ডেকে বলে যে ইনজি ভাই আপনি ফিল্ডারদের সার্কেলের মধ্যে ডেকে নিন। কারণ আমি বল মাঠের বাইরে ফেলব। ঠিক করেওছিল তাই। ওঁকে আটকানো সম্ভব ছিল না আমাদের পক্ষে সেদিন।''  


আরও পড়ুন: নেতৃত্বের ব্যাটন পেয়েই কোহলির বিশ্বরেকর্ড ছুয়ে ফেললেন রোহিত