কলকাতা: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওঁকে দিয়ে আর চলবে না... ওঁ খেলার ছন্দটাই হারিয়ে ফেলেছে...অহংকারই ওঁকে ডুবিয়েছে... ভারতীয় দল থেকে এবার ওঁকে বের করে দেওয়া হোক। হ্যাঁ, এমন অজস্র সমালোচনার ঝড়। যে বিরাট কোহলিকে দলের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ বলা হত, তাঁকেই কি না বাদ দেওয়ার সওয়ালও তুলেছিলেন নিন্দুকেরা। আড়াই বছরের ওপর শতরান নেই। একের পর এক ব্য়াটিং ব্যর্থতা। ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে যাওয়া কিং কোহলির ব্যাট যেন অপেক্ষা করছিল এই ম্যাচটার জন্যই। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চলতি বছর এশিয়া কাপের ম্যাচ। নিজের টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারের প্রথম শতরানই শুধু নয়। বিরাট সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে জানান দিয়েছিলেন যে তিনি এখনও শেষ হয়ে যাননি। আজ ওস্তাদের মার সিরিজে আমাদের প্রতিবেদন বিরাটের সেই ইনিংস --


১০২০ দিন পর সেঞ্চুরি


২০১৯ সালে নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ। ইডেনের মাঠ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপি বলের টেস্টে শেষবারের মত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে আড়াই বছরের বেশি সময় চলে গিয়েছে। বিরাটের ব্যাট যেন নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল। এশিয়া কাপের দলে সুযোগ পাওয়া বিরাটকে নিয়ে এমন প্রশ্নও উঠছিল যে এই টুর্নামেন্টে রান না করতে পারলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকেও বাদ পড়তে পারেন। বিরাট বোধহয় অপেক্ষা করছিলেন সব কিছুর জবাব ব্য়াট হাতেই দেবেন।


৮ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপের ম্যাচ। আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছিল দল। তবে নিয়মরক্ষার এই ম্যাচও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছিল বিরাটের ব্যাটিং তাণ্ডবের জন্য। দুবাইয়ের মাঠের প্রতি কোন থেকে বিরাট বিরাট শব্দব্রহ্ম..ম্যাচে ৬১ বলে অপরাজিত ১২২ রান হাঁকালেন কোহলি। নিজের ইনিংসে ১২টি বাউন্ডারি ও ৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। শতরানও করলেন বিরাটোচিত স্টাইলে বাউন্ডারি ও ছক্কা হাঁকিয়ে।


রোহিত শর্মা না খেলায় কে এল রাহুলের সঙ্গে ওপেনে নেমেছিলেন বিরাট। জাতীয় দলের জার্সিতে এই পজিশনে তাঁকে দেখা না গেলেও আইপিএলে ওপেনে নেমে সফল হয়েছেন আগেও। খেলার শুরু থেকেই একেবারে অন্য মেজাজে ব্যাট করছিলেন। যে বিপুল চাপ তাঁর মাথায় সেদিন তা মাঠে প্রকাশই হতে দেননি বিরাট। এমনকী খেলার মাঝে মাঝেই মিউজিকের তালে ক্রিজেই নেচে উঠছিলেন কিং কোহলি। সেঞ্চুরি করার সঙ্গে সঙ্গেই রিকি পন্টিংকে টপকে কেরিয়ারের ৭১ তম আন্তর্জাতিক শতরানও পূরণ করেন বিরাট।


উল্লেখ্য, সেই ম্যাচে প্রথমে ব্য়াট করে ২ উইকেট হারিয়ে ২১২ রান বোর্ডে তুলে নেয় ভারত। কে এল রাহুল ৪১ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১১১ রানই বোর্ডে তুলতে পারে আফগানিস্তান। ভুবনেশ্বর কুমার ৪ ওভারে ৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। সেই ম্যাচ জয় টুর্নামেন্টে ভারতের কোনও কাজে আসেনি, কিন্তু বিরাটের ব্যাট যেন ওই ইনিংসের মাধ্যমেই জানান দিয়েছিল যে, তিনি এখনও শেষ হয়ে যাননি।