কলকাতা: ওজন একই। ৫.৫ আউন্স। আয়তনও সমান। তবু সুইং হোক বা রিভার্স সুইং, স্পিন - প্রথাগত লাল বলের চেয়ে চরিত্রগতভাবে অনেকটাই আলাদা গোলাপি বল। যে কারণে এই বল নিয়ে ক্রিকেটারদের মনে সংশয়ও রয়েছে ভরপুর। যে ধন্দ আরও বেড়ে যেতে পারে আশিস ভৌমিকের কথায়!


কে এই আশিস ভৌমিক?

বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। একসময় বোর্ডের পিচ কমিটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধি ছিলেন। দলজিৎ সিংহের পর এখন বোর্ডের পিচ কমিটির চেয়ারম্যান। ত্রিপুরার আশিসের তত্ত্বাবধানেই গোলাপি বলে নৈশালোকে টেস্টের জন্য প্রস্তুত হয়েছে ইডেনের বাইশ গজ। আর ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বোর্ডের প্রধান কিউরেটর জানিয়েছেন, গোলাপি বলে রিভার্স সুইং হবে না!

কিন্তু কেন? আশিস বলছেন, ‘বলের ওজন হয় ভেতরে থাকা কর্কের জন্য। লাল বা গোলাপি – দুই বলের ক্ষেত্রেই সেই ওজনটা সমান। তবে চিরাচরিত লাল বল তৈরি হয় ট্যান পড়া চামড়া দিয়ে। আলাদা করে রং করা হয় না। তাই এই বলের পালিশ অনেক দ্রুত ক্ষয়ে যায়। শুরুতে যেমন বোলাররা সুইং পায়, বল পুরনো হলেই রিভার্স সুইং হতে শুরু করে।’ বোর্ডের প্রধান কিউরেটর যোগ করছেন, ‘গোলাপি বলের ক্ষেত্রে চামড়ার কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়। সে কারণে বলের ঔজ্জ্বল্য অনেক বেশি। আর কৃত্রিম প্রলেপের জন্য বলের চকচকে ভাব কমে না বড় একটা। তাই রিভার্স সুইংও হবে না।’

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, রিভার্স সুইংয়ের জন্য সবচেয়ে জরুরি বলের ওজনের তারতম্য। যেটা সম্ভব হয় বলের একদিকে পালিশ থাকলে আর অন্য দিকে পালিশ উঠে গেলে। সেক্ষেত্রে বলের পালিশ থাকা দিকটা ভারি হয় আর পেসারের হাত থেকে রিলিজ হওয়ার পর প্রথাগত সুইংয়ের উল্টোদিকে বল মুভ করতে থাকে। ব্যাটসম্যানরা বিভ্রান্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করে থাকেন। উপমহাদেশের পরিবেশে রিভার্স সুইংকে পেসারের মারণাস্ত্র মনে করা হয়। পাক পেসার সরফরাজ নওয়াজের হাত ধরে যার উৎপত্তি। ভারতীয় বোর্ডের কিউরেটরের পর্যবেক্ষণ সত্যি হলে অবশ্য গোলাপি বলে সেই মারণাস্ত্র প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন মহম্মদ শামি-ইশান্ত শর্মা-উমেশ যাদবেরা।

আর কী বিশেষত্ব রয়েছে এই গোলাপি বলের? আশিস বলছেন, ‘গোলাপি বল অনেক বেশি শক্ত। তাই পিচে পড়ে দ্রুত গতিতে যাবে। সেই সঙ্গে সারাক্ষণ বাউন্স হবে। উপমহাদেশে টেস্টে সাধারণত বল পুরনো হলে উইকেটকিপার গোড়ালি বা হাঁটুর উচ্চতায় বল ধরে থাকে। তবে গোলাপি বলে সারাক্ষণই কোমর বা তারও বেশি উচ্চতায় বল যাবে কিপারের কাছে।’ বোর্ডের প্রধান কিউরেটর যোগ করছেন, ‘লাল বল মেশিনে সেলাই করা হয়। তাই সিম খুব একটা উঁচু হয়ে থাকে না। তবে গোলাপি বলে বোলাররা যাতে বেশি সুইং পায়, সে কারণে হাতে সেলাই করানো হয়। যাতে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে ভারসাম্য থাকে। এতে স্পিনাররাও অল্পবিস্তর সাহায্য পাবে। বল গ্রিপ করতে সুবিধা হবে। পিচে পড়ে বল নড়াচড়াও করবে।’

ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ম্যাচ শুরু হওয়ার আগের দিন জানিয়েছিলেন, গোলাপি বলের গতি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। কোহলি জানিয়েছিলেন, বিশেষ করে উঁচু ক্যাচ নেওয়ার ক্ষেত্রে বলের সম্ভাব্য গতিপথ অনুমান করতে সমস্যায় পড়ছেন ফিল্ডাররা। ব্যাটসম্যানেরাও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কারণ, বলের কাছাকাছি শরীর নিয়ে গিয়ে তাঁরা অনেক সময় উপলব্ধি করছেন যে, বল যতটা ভেবেছিলেন তার চেয়েও বেশি দূর দিয়ে যাচ্ছে। কোহলি বলেছিলেন, ‘ওজন সমান হলেও আমাদের অনুভূতি হচ্ছে যে, গোলাপি বল যেন লাল বলের চেয়ে বেশি ভারি।’

সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে গোধূলিতে গোলাপি বল দেখার সমস্যা আর বোলারদের শিশিরে বল গ্রিপ করা নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছেই। গোলাপি বলের ধাঁধা কীভাবে সমাধান করা যাবে, আপাতত ইডেন টেস্ট থেকেই তার সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে ক্রিকেটমহল।