মুম্বই: সুনীল গাওস্কর। সচিন পূর্ববর্তী ভারতীয় ক্রিকেটে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্যাটার মানা হত তাঁকে। সচিন (sachin tendulkar) ২২ গজে পদাপর্নের পরে গাওস্করের (sunil gavaskar) একাধিক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। তর্কাতিত লড়়াই চলতেই থাকবে যে কে সর্বকালের সেরা, কিন্তু সত্তর, আশির দশকের প্রতিপক্ষ বোলিং আক্রমণের সামনে যেভাবে ধ্রুপদী ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়েছিলেন সানি, তাতে কিছুটা হলেও মাস্টার ব্লাস্টারের থেকে এগিয়ে থাকবেন তিনি। কেরিয়ারে একাধিক সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তার মধ্যেই টেস্টে অন্যতম একটি সেরা ইনিংস গাওস্করের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৭৯ সালে ওভাল টেস্টে করা ২২১ রানের ইনংসটি। আজকের ওস্তাদের মার সিরিজে আমাদের প্রতিবেদন সেই ইনিংস নিয়েই ---
গোটা সিরিজেই সেবার ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স একেবারেই আশানুরুপ ছিল না। সুনীলের ব্যাটও সেভাবে কথা বলেনি সেই ম্যাচের আগে। এজবাস্টনে যেই ম্যাচ ভারত ইনিংসে হেরেছিল, সেখানে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৬১, ৬৮। এরপর লর্ডসে ৪২ ও ৫৯। হেডিংলে টেস্টে ৭৮ ও ওভাল টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৩ রান করেছিলেন গাওস্কর। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে। পাহ়াড়প্রমাণ ৪৩৮ রান তাড়া করতে নেমেছিল ভারতীয় দল। ওপেনিংয়ে চেতন চৌহানের সঙ্গে নেমেছিলেন গাওস্কর। চতুর্থ দিনে রান তাড়া করতে নেমে ৭৬ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়েছিলেন ২ জনে। শেষ দিনে ম্যাচ জিততে দরকার ছিল ৩৬২ রান, তাও আবার ৬ ঘণ্টায়।
কিন্তু শেষ দিনে ৮০ রানে ফিরলেন চেতন চৌহান। এরপর ফিরলেন দিলীপ বেঙ্গসরকার ৫২ রান করে। এই দুটো পার্টনারশিপই হয়েছিল শুরুতে। কিন্তু এরপর থেকে শুধুই আয়ারাম গায়ারাম। একে একে প্যাভিলিয়নে ফিরল ভারতীয় মিডল অর্ডার। কপিল দেব, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, যশপাল শর্মা কেউই রান পাননি সেই ইনিংসে। এক সময় মনে হচ্ছিল যে ম্যাচে হয়ত হারের মুখ দেখতে হবে টিম ইন্ডিয়াকে। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন বোধহয় সুনীল গাওস্কর নিজে। ৪৪৩ বলে ২২১ রানের মাস্টার পিস ইনিংস। প্রায় ৮ ঘণ্টা ক্রিজে ছিলেন তিনি। হাঁকিয়েছিলেন ২১টি বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ৪২৯ রান বোর্ডে ওঠার পর ম্যাচ ড্র ঘোষণা করে দেন আম্পায়াররা। সেদিন লিটল মাস্টারের সেই ইনিংস না থাকলে হয়ত ম্যাচে ভারতের হার কেউ বাঁচাতে পারত না।
ভারত সেই ৪ ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হেরে যায়। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে আরও একটা ঐতিহাসিক ইনিংস উপহার দেন সুনীল গাওস্কর। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ইংল্য়ান্ড বোর্ডে ৩০৫ রান তুলে নেয়।জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২০২ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রান বোর্ডে তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি। চতুর্থ ইনিংসে সুনীলের ব্যাটে ভর করে ম্যাচ বাঁচিয়ে দেয় ভারত। সেদিন ইয়ান বোথামের বলে ডেভিড গাওয়ারের হাতে ক্যাচ তুলে সানি শেষ মুহূর্তে আউট না হলে হয়ত বাকি ৯ রান তুলে ম্যাচ পকেটে পুরে নিত টিম ইন্ডিয়া।