মুম্বই: দলে এক ঝাঁক ছন্দে থাকা ক্রিকেটার। জোরে বোলিং বিভাগে প্রচুর বিকল্প। যশপ্রীত বুমরা থেকে শুরু করে ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি থেকে শুর করে মহম্মদ সিরাজ, প্রচুর নাম। সাউদাম্পটনে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাকে ছেড়ে কাকে খেলাবে ভারত, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে সর্বত্র।


ইংল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে কি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের কৌশল ফাঁস করে ফেললেন বিরাট কোহলি? প্রতিপক্ষ শিবিরকে জানিয়ে ফেললেন, সাউদাম্পটনে ম্যাচ জেতার জন্য কাদের ওপর ভরসা করবেন তিনি?


ঘটনাটি বুধবারের। ইংল্যান্ড রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি ও কোচ রবি শাস্ত্রী। আর সেই প্রেস কনফারেন্সের সময় বিরাট কোহলি ও রবি শাস্ত্রীর একটি কথোপকথনের অডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে কোহলি ও শাস্ত্রীকে নিজেদের মধ্যে দলের বোলিং আক্রমণ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। কিন্তু তাঁরা খেয়ালই করেননি সেই সময় প্রেস কনফারেন্স লাইভ শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা দুজনেই টিম ইন্ডিয়ার বোলিং অ্যাটাক নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন।


ফাঁস হওয়া সেই অডিওতে অধিনায়ক বিরাট কোহলি ভারতীয় দলের কোচকে বলছিলেন, 'আমরা ওদেরকে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে খেলাব। ওদের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রয়েছে। লালা, সিরাজ সবকো স্টার্ট সে হি লাগা দেঙ্গে (লালা অর্থাৎ মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজ, সবাইকে শুরু থেকেই ওদের দিকে লেলিয়ে দেব)।' বিরাট কোহলির এমন কথার উত্তরে রবি শাস্ত্রী শুধু হুম বলেছিলেন। সেই লিকড অডিও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভারতীয় দলের সমর্থকরাও ক্যাপ্টেন ও কোচের সেই কথাবার্তা দারুণ পছন্দ করেছেন।


ইংল্যান্ডের মাটিতে জো রুটদের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে ভারত। তবে তার আগে সাউদাম্পটনে রয়েছে আরও বড় লড়াই। কেন উইলিয়ামসনের নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলবে ভারত। ইংল্যান্ডের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার আগে ভারত অধিনায়কের গলায় আত্মবিশ্বাসী সুর। কোহলি বলে দিলেন, ইংল্যান্ডে যথেষ্ট প্রস্তুতি না থাকলেও তাঁদের সমস্যা হবে না।


বুধবার বিকেলে মুম্বইয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কোহলি বললেন, 'আমি সম্পূর্ণ চাপমুক্ত হয়েই ইংল্য়ান্ডে যাচ্ছি। ভারতীয় ক্রিকেটকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আগেও আমার ওপর কোনও চাপ ছিল না, এখনও নেই।' করোনার ধাক্কায় মাঝপর্বে আইপিএল স্থগিত হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটারেরা কার্যত ঘরবন্দি। পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন মাত্র সময় কাটিয়ে সকলে জড়ো হয়েছিলেন মুম্বইয়ে। সেখানে হোটেলে কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মেনে তারপর তাঁরা জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করেছেন। সকলে পৌঁছে গিয়েছেন ইংল্য়ান্ডে। গোটা দল বেশ কিছুদিন প্রস্তুতির মধ্য়ে নেই। অন্যদিকে নিউজ়িল্যান্ড ইতিমধ্যেই শুধু ইংল্যান্ডে পৌঁছেই যায়নি, বুধবার থেকেই লর্ডসে জো রুটদের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ খেলতে শুরু করে দিয়েছেন। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট ফাইনালের আগে ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলে ফেলবেন উইলিয়ামসনরা। অনেকের মতে, এটা কিউয়ি ক্রিকেট বোর্ডের মাস্টারস্ট্রোক। ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে অনেক বেশি সড়গড় থাকবেন ব্ল্যাক ক্যাপসরা।


যদিও এই প্রশ্ন উড়িয়ে দিচ্ছেন কোহলি। তিনি বলেছেন, 'পরিবেশ দুই দলের জন্য একইরকম থাকবে। সে তো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াও পরিবেশের সুবিধা পেয়েছিল। বিমানে ওঠার আগেই যদি বলেন নিউজ়িল্যান্ড এগিয়ে, তো কিছু বলার নেই। আমাদের অন্তত মনে হচ্ছে দুই দলই সমান জায়গায় দাঁড়িয়ে।' ২০১৪ সালে অভিশপ্ত ইংল্যান্ড সফরের কথা ভোলেননি বিরাট। যে সফরে জেমস অ্যান্ডারসনের স্যুইংয়ের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। বিরাট বলেছেন, '২০১৪ সালে দাঁডিয়ে ভাবতে পারিনি ২০২১ সালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলব।'


বিশ্বের সেরা টেস্ট দল কারা, ভারত, নাকি নিউজ়িল্যান্ড, আর কিছুদিনের মধ্যেই তা নির্ধারিত হয়ে যাবে। ১৮-২২ জুন সাউদাম্পটনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি বিরাট কোহলির ভারত ও কেন উইলিয়ামসনের নিউজ়িল্যান্ড। বুধবার সন্ধ্য়ায় মুম্বই থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশে পাড়ি দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। তার আগে সাংবাদিকদের ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রী বলে গেলেন, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল বেস্ট অফ থ্রি ফর্ম্যাটে হওয়া উচিত ছিল।


শাস্ত্রী বলেছেন, 'বেস্ট অফ থ্রি ফাইনাল হয়তো আদর্শ হতো। তবে একটা ম্যাচ একটা ম্যাচই। ছেলেরা এই জায়গাটা অর্জন করে নিয়েছে। এটা রাতারাতি হয়নি। ছেলেরা দীর্ঘদিন ধরে এক নম্বর জায়গাটা ধরে রেখেছে।' তিনি যোগ করেছেন, 'বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ফাইনাল খেলতে চলেছি। খেলাটার গুরুত্বের কথা ভাবলে এটাই সবচেয়ে বড় ম্যাচ। এই ফর্ম্য়াট আপনার পরীক্ষা নেবে। দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী জুড়ে খেলেছে আর তারপরই ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে।'


ভারতীয় ক্রিকেট একটা নতুন দিগন্ত রচনা করতে চলেছে। একই সঙ্গে দুটি দল বিশ্বের দুই প্রান্তে ক্রিকেট মাঠে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। কারণ, বিরাটরা যখন ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলবেন, তখন ভারতের আরও একটি দল শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলবে। যা নিয়ে শাস্ত্রী বলেছেন, 'সারা বিশ্বে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রসার ঘটাতে হলে এটাই একমাত্র রাস্তা। অলিম্পিক্সে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হলে দলের সংখ্যা বাড়াতে হবে।'