লন্ডন: আর দিনকয়েকের অপেক্ষা, তারপরেই শুরু হয়ে যাবে টেস্টের সেরার শিরোপা জেতার লড়াই। দক্ষিণ লন্ডনের ওভালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া (IND vs AUS) একে অপরের মুখোমুখি হবে বিশ্ব টেস্টচ্যাম্পিয়নশিপের (WTC Final 2023) খেতাব জেতার লক্ষ্যে। দীর্ঘদিন ভারতীয় দল কোনও আইসিসি ট্রফি জেতেনি। সেই নিয়ে কম জলঘোলাও হয়নি। এমনকী গতবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরাস্ত হয়েছিল ভারত। অতীতের সেইসব হতাশা মুছে ফেলে তাই খেতাবের খরা কাটাতে বদ্ধপরিকর হয়েই মাঠে নামবে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল।
ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ মানেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, মহাতারকাদের ছড়াছড়ি। সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে বেশ কয়েকজন ছন্দে থাকা খেলোয়াড় আসন্ন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে মাঠে নামবেন। টিম ইন্ডিয়ার হয়ে এই ম্যাচে নামার আগে তাঁদের আত্মবিশ্বাস কিন্তু তুঙ্গে থাকবে। ঠিক কোন কোন খেলোয়াড় আসন্ন ফাইনালে ভারতের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন?
নজরে পাঁচ
প্রথমেই যার নাম আসবে তিনি বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। আইপিএলে নিজের শেষ দুই ইনিংসে দুই শতরান হাঁকানো কোহলি কিন্তু নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজিকে প্লে-অফে তুলতে পারেননি। তাই তিনি সাফল্য পাওয়ার বাড়তি তাগিদ নিয়ে মাঠে নামতেই পারেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোহলির রেকর্ডও বেশ ঈর্ষণীয়। বিরাট অজিদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত লাল বলের ক্রিকেটে ৪২টি ইনিংস খেলে ১৯৭৯ রান করেছেন। হাঁকিয়েছেন আটটি শতরান ও পাঁচটি অর্ধশতরান।
বিরাটের পাশাপাশি ভারতীয় টেস্ট দলের অন্য়তম স্তম্ভ হলেন চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara)। বর্তমান যুগের ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট নয়, বরং প্রথাগত টেস্ট ক্রিকেটে খেলায় বিশ্বাসী পূজারা। তিনি আইপিএলে কোনও দলের অংশ ছিলেন না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে ভুরিভুরি রান করেছেন ভারতের তারকা ব্যাটার। ইংল্যান্ডে তাঁর খেলার অভিজ্ঞতা যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কাজে লাগবে, তা বলাই বাহুল্য। এই দুই তারকাকে নিয়ে রিকি পন্টিংও কিন্তু অজি দলকে আগেভাগেই সতর্ক করে রেখেছেন।
কোহলি ও পূজারা যেখানে এক দশকের উপর ভারতীয় দলের ব্যাটিংকে ভরসা প্রদান করছেন, সেখানে একেবারেই নবাগত হলেন শুভমন গিল (Shubman Gill)। কেএল রাহুল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় ফাইনালে রোহিত শর্মার সঙ্গে গিলের ওপেন করা প্রায় পাকা। তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটার বর্তমানে স্বপ্নের ছন্দে রয়েছেন। সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে তিনি তিনটে শতরান হাঁকিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকও হন গিল। ফর্ম্যাট বা বলের রং বদলালেও রান করার আত্মবিশ্বাসে কিন্তু তা তেমন প্রভাব ফেলে না। আর গিলের আত্মবিশ্বাসই ভারতের ভরসার বড় কারণ।
গিলের পাশাপাশি আইপিএলের মঞ্চ মাতিয়েছেন তাঁরই ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলা মহম্মদ শামিও (Mohammad Shami)। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক হন তিনি। নতুন বলে শামির সুইং সামলাতে ব্যাটারদের নাজেহাল হতে হয়। শামির রেকর্ড ওভালে খুব ভাল না হলেও, বুমরার অবর্তমানে তিনিই ভারতীয় বোলিং বিভাগের নেতা। আর ইংল্যান্ডের সুইং সহায়ক পরিবেশে কে বলতে পারে, শামি হয়তো একাই সব হিসেব নিকেশ লন্ডভন্ড করে দিলেন।
শেষে যার কথা না বললেই নয়, তিনি রবীন্দ্র জাডেজা (Ravindra Jadeja)। দিন বদলায়, ফর্ম্যাট বদলায়, জার্সির রংও বদলায়, কিন্তু বদলায় না জাডেজার ধারাবাহিকতা। আইপিএলের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে শেষ দুই বলে দুইটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সিএসকেকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন তিনি। ইংল্য়ান্ডের ওভালে কিন্তু তৃতীয় দিনের পর থেকে স্পিনাররা বেশ ভালই মদত পান। সেখানে জাডেজার ঘূর্ণি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে জাডেজা ভারতের অন্যতম সফল ব্যাটারও বটে। মুশকিলের সময় একাধিকবার তিনি ব্যাট হাতে ভারতের ত্রাতা হয়ে উঠেছেন। লোয়ার অর্ডারে ব্যাটার জাডেজার অবদানও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
এই পাঁচ তারকা যদি নিজেদের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেন, তাহলে ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভাল খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে। তবে ক্রিকেটে সবসময়ই সেইদিন মাঠে কে, কেমন পারফর্ম করছেন, সেটাই গুরুত্ব পায়। তাই গিল, জাডেজারা নিজেদের দক্ষতার প্রদর্শন করতে পারেন কি না, সেটার জন্য ৭ জুন অবধি অপেক্ষা করতেই হবে।
আরও পড়ুন: আমের পরে ঠান্ডাপানীয় খেলে সত্যিই বিপদ? না কি শুধুই রটনা?