কলকাতা: অফফর্ম, ব্য়াটে রান নেই, পারফরম্যান্স ভাল নয়। এগুলো হলে নয়ত মানা যেত। লড়াই করে, কঠিন অনুশীলনের মাধ্য়মে কামব্যাক করা সম্ভব। কিন্তু যেই মানুষটার শরীরে ক্যান্সার (Cancer) নামক মারণ রোগের বাস, সে সাহস পাবে কীভাবে? তাঁর কাছে ক্রিকেট খেলার থেকে বেঁচে থাকার মূল্য যে অনেক বেশি। তবে তিনি অন্য ধাতুতে গড়া। তাই ক্রিকেটও খেললেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হলেন, আবার ক্যান্সারকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে হাল ছাড়ার পাত্র কোনওদিনই তিনি ছিলেন না। এতদূর পড়ে সবাই বুঝতেই পারছেন যে কাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। হ্যাঁ, ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন তারকা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংহ (Yuvraj Singh)। যাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভর করেই ২০১১ বিশ্বকাপে (World Cup) খেতাব ঘরে তুলেছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। সেই টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত অর্ধশতরানের ইনিংস খেলেছিলেন যুবি। সুরেশ রায়নাকে সঙ্গী করে ম্যাচ জিতিয়ে ভারতকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর একই সঙ্গে ২৪ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। আজকে ওস্তাদের মার সিরিজে যুবরাজের সেই ইনিংস নিয়েই আমাদের প্রতিবেদন -


টুর্নামেন্টের শুরুতেই অসুস্থ যুবরাজ


ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আসর। লিগ পর্যায়ের ম্যাচ চলছে। সেদিন ছিল ২০ মার্চ ২০১১। বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে মাঠেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যুবরাজ। ব্যাট করার সময় আচমকাই বমি করতে শুরু করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের সেই সময়ের পোস্টার বয়। কোনো মতে নিজেকে সামলে ব্যাট হাতে ১২৩ বলে ১১৩ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংসও উপহার দিয়েছিলেন।


অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ৫৭ কোয়ার্টার ফাইনালে


বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়া বরাবরই শক্ত গাঁট ভারতের। সেদিনও হয়ত খাতায়-কলমে অনেকেই অজিদেরই এগিয়ে রেখেছিলেন। মোতেরায় সেই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ৫০ ওভারে ২৬০ রান তুলে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্য়াট করতে নেমে অর্ধশতরান হাঁকান গৌতম গম্ভীর ও সচিন তেন্ডুলকর। তবে ৩৮ নম্বর ওভারে ভারতের ১৮৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকেই খেলা ঘুরিয়ে দেন যুবরাজ। ছিলেন রায়নাও। ২ জনে মিলে অপরাজিত ৭৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। ইনিংসের ৪৮ তম ওভারে ব্রেট লি-কে কভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন যুবরাজ। সেলিব্রেশনও ছিল চোখ পড়ার মতো। পিচেই বসে পড়ে হুঙ্কার পাঞ্জাবের তনয়ের। ৬৫ বলে ৫৭ রান করে নট আউট থাকেন যুবরাজ। 


এরপর সেমিতে পাকিস্তান ও ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ব্যাটে-বলে গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট হন যুবরাজ। বিশ্বকাপের পর ক্যান্সারের চিকিৎসা সেরে ফের ২২ গজে প্রত্যাবর্তন করলেও আগের ঝাঁঝ আর পাওয়া যায়নি যুবির ব্যাটে। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার।