কলকাতা : হঠাতই ফোনে একটা মেসেজ ! 'আপনি কি এখন মিস্টার এক্সের সঙ্গে কথা বলছেন? '....'এই মেসেজটাই পাঠিয়েছেন তো মিস্টার ওয়াইকে?'.... আবার আপনার মোবাইলে তোলা ভিডিও বা ছবিই ঘুরে চলে এল আপনার কাছে। 'ছবিটা বেশ তো ! '.... আপনি ফোন মারফত কী করছেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, কী ছবি তুলছেন সব পেয়ে যাচ্ছেন হ্যাকাররা। মুঠো-ফোন আপনার মুঠোয় থাকলেও, ফোনের সব তথ্য চলে যাচ্ছে অন্য কারও কাছে । ভাবছেন, আপনি তো বিখ্যাত কেউ নন? তাহলে কেন হ্যাক কেউ করবে আপনার ফোন? হ্যাঁ, হচ্ছে। এমনটাই হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ফোনও হ্যাক করছে একদন হ্যাকার। তারপর ফোন কল, ব্ল্যাকমেল।
না । এর জন্য কোনও বিশাল দামী সফটওয়্যার লাগছে না। পেগাসাসের মতো বদনামি-দামী হ্যাকিং সফটওয়্যারও লাগছে না। এক্কেবারে ফ্রি হ্যাকিং সফটওয়্যার এখন বাজারে অগুনতি। আর তা হ্যাকাররা ছলে বলে কৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে আপনার ফোনে। আর তারপর সব তথ্য চুরি ! সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জানালেন, পেগাসাসের মতো দামী না হলেও চলবে, তার চেয়ে অনেক কমজোরি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেই, স্মার্টফোন থেকে চুরি হয়ে যেতে পারে তথ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত দিন যাচ্ছে, ততই হ্যাকিংয়ের প্রযুক্তি আরও উন্নত হচ্ছে। অজান্তেই, আপনার মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু করে আপনি কোথায় যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন :
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি মর্ফ করে ব্ল্যাকমেলিং ! টাকার চাপে মাথা না নুইয়ে বাঁচবেন কীভাবে?
সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলের হাতে এধরনের প্রচুর কেস রয়েছে। কিন্তু অতি সাবধানে ফোন ব্যবহার করা মানুষের ফোনে কীভাবে ঢুকছে স্পাইওয়্যার? দরজাটা কোথায়? সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জানালেন, মনে করা হচ্ছে, এখন অভিভাবকদের ফোন ক্লাস করার জন্য থাকে কচিকাঁচাদের কাছে। তারা ক্লাস করতে করতেই হয়ত পাচ্ছে কোনও অপরিচিতের কাছ থেকে চ্যাট রিকোয়েস্ট। তারপর বুঝতে না পেরে চ্যাটে ঢুকে পরলেই সোজাসুজি ফোনের আয়ত্ব চলে যাচ্ছে হ্যাকারদের হাতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন কচিকাঁচারা অনেকটা সময় বড়দের ফোন হাতে পায়। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে হ্যাকাররা। তার কোনও কৌশলে ঢুকে পড়ছে স্কুলের বাচ্চাদের অনলাইন ক্লাসে। তারপর সুযোগ বুঝে ছোট্ট পড়ুয়াকে হাই-হ্যালো পাঠিয়ে কথোপকথনে আসার চেষ্টা করছে। ছোটরাও অনেকক্ষেত্রে বুঝতে না পেরে বা আগ্রহের বশে তাতে সাড়া দিচ্ছে। এভাবেই হ্যাকাররা সস্তার বা বিনামূল্যের সফটওয়্যার ঢুকিয়ে দিচ্ছে ফোনে।
এর থেকে বাঁচার উপায় কি?
- বাচ্চাদের হাতে ফোন দিন, কিন্তু নির্দিষ্ট করে বুঝিয়ে দিন ঠিক কী করবে সে।
- কৌতুহল বশত কোনও লিঙ্কে বা চ্যাট রিকোয়েস্টে ক্লিক করা থেকে যেন তারা বিরত থাকে।
- অনলাইন ক্লাস চলাকালীনও অচেনা কারও প্রশ্নের উত্তর যেন না দেয়।
স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে যেভাবে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে হানা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে, তা ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক।