আগরতলা: সেনায় নিযুক্তির ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প (Agnipath Scheme) নিয়ে বিক্ষোভ চলছে দেশ জুড়ে। তার মধ্যেই ‘অগ্নিবীর’দের (Agniveer) দলীয় কার্যালয়ে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করার কথা বলে বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছেন বিজেপি (BJP) নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya)। সেই নিয়ে চারিদিকে যখন নিন্দার ঝড় উঠছে, কৈলাস এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Abhishek Banerjee)। সরাসরি নাম না করলেও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) এবং তাঁর ছেলে জয় শাহকে (Jay Shah) নিশানা করেছেন অভিষেক। তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘‘বিজেপি নেতার ছেলে বিসিসিআই-এর সচিব হবেন, আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে দারোয়ান হবেন, এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না।’’
ত্রিপুরায় ‘অগ্নিবীর’দের অবমাননা নিয়ে সরব অভিষেক
উপ নির্বাচনের আগে সোমবার ত্রিপুরায় (Tripura Bypolls) গিয়েছেন অভিষেক। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। ‘অগ্নিবীর’দের নিয়ে কৈলাসের মন্ত্বব্যে মতামত চাইলে বলেন, ‘‘নিন্দার ভাষা নেই আমার কাছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং বেদনাদায়ক মন্তব্য। এটা মোদি সরকারের প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, নোটবন্দি সিদ্ধান্তও ছিল অপরিকল্পিত। যাঁরা প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন, তাঁদের কথা না ভাবে নোটবন্দি থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, কৃষক আইনের মতো প্রকল্প আনা হয়েছে। দু’দিন অন্তর একটি করে বদল।’’
‘অগ্নিবীর’দের দারোয়ান নিযুক্ত করার কথা বলে কৈলাস দেশের সৈনিকদের অপমান করেছেন বলে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিষেকও এ ব্যাপারে একমত। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতীয় সেনা, আধাসেনা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ছবিকে সামনে রেখে নির্বাচনে লড়েন ওঁরা। আর নির্বাচন মিটে গেলে বলেন, চার বছর পর চাকরি থেকে অব্যাহতির পর অগ্নিবীররা বিজেপি-র কার্যালয়ে নিরাপত্তারক্ষী হবেন। এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে!বিজেপি নেতার ছেলে বিসিসিআই-এর (BCCI) সচিব হবেন, বিজেপি নেতার ছেলে এশিয়ান ক্রিকেটের কাউন্সিলর প্রেসিডেন্ট হবেন, যিনি বলছেন, সেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ছেলে বিধায়ক হবেন, ব্যাট দিয়ে আমলাকে মেরে বেড়াবেন। আর সাধারণ, দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে চার বছরের জন্য অগ্নিবীর হয়ে দারোয়ানগিরি করবেন!’’
অভিষেকের মতে, সাধারণ মানুষই এর জবাব দেবেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন, সাধারণ মানুষের ভাল জায়গায় চাকরি, সেনাবাহিনীতে দেশসেবার অধিকার নেই? আসলে ওদের উদ্দেশ্য এটাই। কৈলাস শুধু মুখ ফস্কে বলে ফেলেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিসান রেড্ডিও বলেছিলেন, অগ্নিবীররা ফিরে এসে নাপিত হবেন, বিদ্যুকর্মী হবেন, প্লাম্বার হবেন। নিজের ভাষায় বলেছেন বলে, তা নিয়ে সমালোচনা হয়নি। এক জন্যই কি অগ্নিবীর! ধিক্কার জানাই। সেনাকে ন্যূনতম সম্মান করলে, ভালবাসলে, অবিলম্বে এঁদের বহিষ্কার করা উচিত। আমাদের দলের হলে তাই করলাম। বালাকোটকে সামনে রেখে ভোট করেছিলেন। এখন আর সেনাকে দরকার নেই! নাকি ২০২৪-এর তিন মাস আগে দরকার পড়বে! তাই এখন যা খুশি বলা যায়! বিজেপি মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী হবেন, বিসিসিআই সচিব হবেন, আর খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে দারোয়ান হবেন, এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না।’’
কৈলাসকে বহিষ্কারের দাবি জানালেন অভিষেক
যে বিজেপি রোহিঙ্গা তাড়াতে সিএএ নিয়ে চিৎকার করে বেড়ায়, তাদের কৈলাসের মতো নেতাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন অভিষেক। সেনায় চাকরি প্রার্থীদের উদ্বেগ, সমস্যার সঙ্গে একমত হলেও, অহিংস পথএ আন্দোলন করার পক্ষেও এ দিন আবেদন জানাতে দেখা যায় তাঁকে। আভিষেকের মতে, গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ, আন্দোলনের অধিকার রয়েছে সকলেরই। কিন্তু তাতে যেন নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি না হয়, আন্দোলন যাতে শান্তিপূর্ণ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
অভিষেকের আগে, তৃণূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী এবং বিজেপি-র নেতা বরুণ গাঁধীও কৈলাসের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন।