প্রসেনজিৎ সাহা, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, আগরতলা ও ত্রিপুরা: ত্রিপুরায় পুরোদমে শুরু আসন্ন বিধানসভার ভোট প্রচার। ভোট প্রচারের জন্য সোমবারই উত্তর পূর্বের রাজ্যটিতে পা রেখেছেন দুই তাব়ড় রাজনীতিবিদ। একদিকে ত্রিপুরা পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার অন্যদিকে ত্রিপুরা পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন আগরতলার অলিগলিতে ঘুরে বেরিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বলেছেন সাধারণ লোকেদের সঙ্গে। তাঁকে দেখা গিয়েছে শিঙাড়া তৈরি করতে, পান সাজাতেও হাত লাগিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে সোমবারই ত্রিপুরাতে জোড়া জনসভা করেছেন অমিত শাহ। সেই জনসভায় তাঁর বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এদিন অমিত শাহ তাঁর বক্তব্যে আগাগোড়া নিশানা করেছেন সিপিএম-কে। তার সঙ্গে তুলোধনা করেছেন কংগ্রেসকেও। কিন্তু কোনও নির্বাচনী সভা থেকেই একটাও শব্দ খরচ করলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম।


বিধানসভা ভোটের প্রচারে আজ ত্রিপুরায় গেলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও নির্বাচনী সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটাও শব্দ খরচ করলেন না অমিত শাহ। আক্রমণ করলেন শুধুই বাম এবং কংগ্রেসকে! যা নিয়ে ফের আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম।


কী বলেছেন শাহ:
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, 'কমিউনিস্ট পার্টি বিজেপির সঙ্গে একা লড়ে জিততে পারবে না, তাই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট। মথার সঙ্গে গুপ্ত জোট বেঁধেছে। মথাকে ভোট দেওয়া মানে বামেদের ভোট। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে, বামেদের ভোট।' তিনি আরও বলেন,' বামেদের ভোট দেওয়া মানে ফের হিংসায় ডুববে ত্রিপুরা। আপনারা বলুন, ফের ত্রিপুরায় হিংসা চান? .....বিজেপিকে ভোট মানে মোদিজিকে ভোট, বিকাশকে ভোট, ত্রিপুরার উন্নয়নকে ভোট।' একই দিনে ত্রিপুরায় তৃণমূল-বিজেপির হেভিওয়েটরা। সোমবার উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য়ে পা রাখলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। আর সেদিনই এখানে জোড়া সভা করলেন অমিত শাহ। দুটি সভা থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু নিশানা করেছেন বাম আর কংগ্রেসকে। তাঁর মুখে শোনা গেল না তৃণমূলের নাম।


গতবছর পুরভোটের আগে ত্রিপুরায় তৎপরতা বাড়িয়েছিল তৃণমূল। ৩৩৪টি আসনের মধ্যে ৫৯টিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল তারা। এবার বিধানসভা ভোটের আগে সেখানে পৌঁছে গেছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। মঙ্গলবার সেখানে কর্মসূচিও রয়েছে তাঁরা। কিন্তু, তার মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে, দু-দুটি সভা করেও তৃণমূলের নাম অমিত শাহ মুখেই আনলেন না কেন? সেই প্রশ্ন তুলেই ফের সেটিংয়ের অভিযোগে সুর চড়িয়েছে সিপিএম।


সিপিএমের তোপ:
ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য় সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, 'এখানেও দিদি-মোদি কৌশল, যেটা বাংলায় চলে, এখানও কেউ কারও কথা বললেন না। ফলে বুঝে নিতে হবে কার পাশে কে আছে।'


যদিও তৃণমূল-বিজেপি কেউই এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন,'অমিত শাহ যদি তৃণমূলের নাম না নিয়ে থাকেন, কিন্তু ১০ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছে, তাদের নামগুলি কি নিচ্ছেন? ওদের ফেরানোর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মানুষের জন্য কোনও কথা নেই।' রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, 'যারা ঘুরতে আসে, তাদের নিয়ে কে আবার কী বলবে।'


১৬ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে ত্রিপুরায়। ফল বেরবে ২ মার্চ। ৬০ আসনের মধ্যে ২৮টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার আগরতলার রবীন্দ্রভবন থেকে ৭ কিলোমিটার পদযাত্রা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পদযাত্রার শেষে রবীন্দ্রভবনেই করবেন নির্বাচনী সভা। তার আগে সোমবার ত্রিপুরায় দাঁড়িয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, 'যখন কেউ ছিল না, তখন বিজেপির একতরফা অত্যাচার হয়েছে, সাংবাদিকদের উপর হামলা হচ্ছে, আমাদের লোকেদের উপর আক্রমণ হয়েছে, গাড়ি ভাঙা হয়েছে, দোলা-কাকলি-রাজীবেদের গাড়ি ভাঙচুর সব হয়েছে। আমি কাল আরও বলব।'


যদিও, সিপিএমের দাবি, এটা স্রেফ বিরোধী ভোটে ভাগ বসানোর কৌশল। পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী হয়ে উঠতে, তৃণমূল যেভাবে বিজেপিকে সাহায্য করেছে, ত্রিপুরায় সেভাবেই তৃণমূলকে বিরোধী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে বিজেপি।


আরও পড়ুন: 'আমার ঘরে তো কোনও পুরুষ আসে না' শোভনের সঙ্গে বিচ্ছেদ মামলা নিয়ে বৈশাখীকে আক্রমণ রত্নার