প্রসেনজিৎ সাহা, ত্রিপুরা: ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন প্রায় দোরগোড়ায়। ওই ভোটে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার কথা উঠলেও, আপাতত তা বিশ বাঁও জলে। কংগ্রেস ও বামেদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। অন্যদিকে তিপ্রামথাও অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। জোট নিয়ে তারা কী ভাবছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে সেখানে লড়াই কি বহুমুখী? তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা।
কার কত আসনে প্রার্থী?
ত্রিপুরায় বাম ও কংগ্রেসের জোট কার্যত বিশ বাঁও জলে। জোটের ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি তিপ্রামথা। বিজেপিকে রুখতে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জোট করে ত্রিপুরায় ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাম ও কংগ্রেস। কিন্তু আসন নিয়ে দর কষাকষির মধ্যেই কংগ্রেসকে ১৩টি আসন ছেড়ে বাকি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেয় বামেরা। কংগ্রেসও ১৩টির বদলে মোট ১৬টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়ে দেয়। আর অন্যদিকে ৫৯টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে বামেরা। একটি আসনে লড়ছে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। তিপ্রামোথাও ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে আদৌ বিরোধীরা জোট হবে কি না, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে সংশয়। এই বিষয়ে কংগ্রেসের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, 'শুধু কংগ্রেস নয়, তিপ্রামথার সঙ্গেও আলোচনা চলছে, খুব শিগগিরই সমাধান সূত্র বেরোবে, প্রদ্যোতের সঙ্গে কথা হয়েছে।'
কোনদিকে তিপ্রামথা:
এদিকে, পৃথক তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব তিপ্রামথা। ত্রিপুরা রাজ পরিবারের সদস্য প্রদ্যোৎ কিশোর দেব বর্মণের নেতৃত্বাধীন দলটির অবস্থান ছিল, যারা লিখিতভাবে তিপ্রাল্যান্ড গঠনের ব্যাপারে আশ্বাস দেবে, ভোটে তাদের সঙ্গেই থাকবে তিপ্রামথা। সম্প্রতি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনায় বসেন প্রদ্যোৎ কিশোর। যদিও রফাসূত্র বেরোয়নি। অন্যদিকে, বিজেপির জোটসঙ্গী আইপিএফটি-র সঙ্গে আলোচনা চললেও, তারা শেষপর্যন্ত তিপ্রামথা-র সঙ্গে মিশে যায়নি। বরং বিজেপির সঙ্গে জোট বজায় রেখে, ৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে আইপিএফটি। এই পরিস্থিতিতে ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তিপ্রামথা। এই নিয়ে তিপ্রামথার রাজ্য সভাপতি বিজয়কুমার রাঙ্খল বলেন, 'এই বিষয়গুলি দায়িত্ব চেয়ারম্য়ানের, আমাদের কথা বলার জায়গা নেই।'
ত্রিপুরায় গত ২ বছরে ক্ষমতাসীন বিজেপির কোন্দল প্রকট হয়েছে। দলত্যাগ করেছেন একাধিক বিধায়ক। পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বদলাতে হয়েছে বিজেপিকে। এতকিছু সত্বেও ভোটের মুখে বিরোধী ঐক্য দানা না বাধায়, তা নিয়ে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। ত্রিপুরা বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, 'তিপ্রামোথার ডিমান্ড ছিল গ্রেটার টিপ্রাল্যান্ড, যারা লিখিত দেবে, তাদের সঙ্গে যাবে, সিপিএম কি এখন পৃথক রাজ্যকে সমর্থন করছে?'
ত্রিপুরার উনকোটি জেলার কৈলাশহর আসনটি নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। এবার ওই আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়েছে সিপিএম। যার জেরে গতবার ওই আসনে জয়ী সিপিএমের মবস্বর আলি ২৭ জানুয়ারি বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁকেই এবার কৈলাশহর থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কিন্তু, মবস্বর আলি বামেদের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা না দিয়ে, বিজেপির টিকিটে দাঁড়ানোয়, তাঁর প্রার্থীপদ বাতিলের দাবিতে রিটার্নিং অফিসারকে চিঠি দিয়েছে সিপিএম।
কবে ভোট:
১৬ ফেব্রুয়ারি ৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভায় ভোট গ্রহণ। ফল ঘোষণা হবে ২ মার্চ।
ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন বিজেপিকে কি আদৌ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে বিরোধীরা? সংশয়ের কারণ, উত্তর-পূর্বের বাঙালি অধ্যুষিত এই রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের মোকাবিলায় দানা বাধেনি বিরোধী জোট!
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিমা খাতে ছাড়? গৃহঋণে বাড়বে করছাড়? বাজেট ঘিরে প্রত্যাশা কী কী?