কলকাতা: সিটি অফ জয়। কলকাতার পোশাকি নাম এটাই। তবে সপ্তাহখানেক আগেও যেভাবে গোলাপি আলোয় নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছিল এই শহর, তাতে অনেকেই কলকাতাকে ডাকছিল পিঙ্ক সিটি বলেও। না জয়পুর ভেবে ভুল করার কোনও কারণ নেই। উৎসব মরসুমের শেষ লগ্নে আরও এক উৎসবে সামিল হয়েছিল এই শহর। যার সমস্ত আয়োজন ছিল ক্রিকেট নিয়ে। ইডেনের ওপর কম্পাস বসিয়ে বৃত্ত আঁকলে, এদিকে দ্য ফরটি টু, ওদিকে শহিদ মিনার থেকে টাটা সেন্টার সব ইমারতই সেজে উঠেছিল গোলাপি রঙে। ইডেনও মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোলাপি আলোয়। উপলক্ষ্য অবশ্যই দিনরাতের টেস্ট।



এশিয়া মহাদেশে প্রথমবার গোলাপি বলের টেস্ট। সেটাও কলকাতা, ইডেন গার্ডেন্সে। আর এই আয়োজনের নেপথ্য নায়ক অব্শ্যই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সিএবি প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ই গোলাপি বলের ম্যাচ আয়োজন করে সৌরভ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, পারলে ইডেন-ই পারবে। হলও তাই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই বিরাট কোহলিকে রাজি করিয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব পাঠালেন সৌরভ। সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই শুরু হয়ে গিয়েছিল মহা আয়োজন। ২২ নভেম্বর দুপুরে গোলাপি বলের টেস্টের উদ্বোধন করে দিয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আর যাদের জন্য এই সমারোহ, তারও সামিল হলেন হাজারে হাজারে। প্রথম দিন ৬০ হাজারের ওপরে দর্শক। দ্বিতীয় দিনেও মাঠ ভরে গিয়েছিল। আর তৃতীয় দিনে যখন ভারতের জয় নিশ্চিত, তখনও বিরাটদের দেখতে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, এমনকী রাতেও ইডেনে ঢেউ খেলছে ‘মেক্সিকান ওয়েভ’। সন্ধ্যায় মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ক্রিকেট জনতা জানান দিচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে আছে। শেষ কবে কোনও টেস্ট দেখতে এত মানুষ ইডেনে এসেছিল? খুব কাছাকাছি, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। সেটা যদিও ছিল টি-টোয়েন্টি। টেস্ট ক্রিকেটে ইডেনে ৬৬ হাজারের উপস্থিতি! অস্ট্রেলিয়া যেবার হেরেছিল, ভিভিএস-দ্রাবিড় সারাদিন ব্যাট করেছিলেন, হরভজনের ছিল হ্যাটট্রিক, ওই ম্যাচ ছাড়া ইডেনে টেস্ট ম্যাচে এত ভিড়, না বলা মুশকিল।



কলকাতার উত্তাল ক্রিকেট জনতার চিল চিৎকার। কো-হ-হ-হ-হ-লি, কো-হ-হ-হ-হ-লি। ইশান্ত, শামি, উমেশের প্রতিটা রান আপে হু-উ-উ-উ গর্জন। আর মধ্যে মধ্যেই ইন্ডিয়া-য়া-য়া, ইন্ডিয়া কলরব। বাংলাদেশি ক্রিকেটার রাহিকে বাউন্ডারি লাইনে পেয়েই গান গেয়ে ওঠা, ‘ও রাহি, ও রাহি’- এটা কলকাতাই পারে। বিরাটের ক্যাচ নেওয়ার পর তাইজুলের জন্য হাততালিও দেয় এই কলকাতা। আর এই শহর ছাড়ার আগেই ক্রিকেটের আধুনিক ডন বলে দিয়ে গেলেন, ‘কলকাতা তুমি চমৎকার’। পিঙ্ক বলের সূচনা যেভাবে হল, তা আগামিতেও এগিয়ে যাক, এই আশা নিয়েই ইডেন ছাড়লেন বিরাট। আর তারও আগে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে গেলেন দাদাকে।





বোলাররা ভারতকে ম্যাচ জিতিয়ে দিচ্ছেন। তাও আবার পেস বোলাররা। এমনই পারফরম্যান্স যে বিরাট কোহলির শতরানের মহাকাব্য দেখার পরও বলতে হচ্ছে উ-ফ-ফ ইশান্ত, কী বলটাই না করল ছেলেটা। এই ম্যাচের নায়ক ও সিরিজ সেরাও হয়েছেন তিনি। বিরাট কোহলি নিজেও মেনে নিয়েছেন, বোলাররা যেভাবে পারফর্ম করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ক্রিকেটারদের মধ্যে খিদে আছে। প্রতিটা মুহূর্তে লড়ছে। এই মানসিকতাই গোটা দলকে বদলে দিয়েছে। আর এই মানসিকতার শুভ মহরত হয়েছিল সৌরভের হাত ধরেই। বিরাটের বক্তব্য, তাঁরা সেই ধারাকে কেবল এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।