কলকাতা: বছর প্রায় শেষের দিকে। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের আবহ। আর ঠিক এই সময়েই শুরু হয় কেনাকাটা। বিভিন্ন জায়গায় নানারকম অফার শুরু হয়, সেল শুরু হয়। পছন্দের জিনিস কম দামে কেনার জন্য অনেকেই এই সময় কেনাকাটা করে থাকেন। আর এই সময়েই বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে শুরু হয় ঢালাও অফার। ঠিক এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন বহু ক্রেতা। উৎসবের এই মরসুমের মধ্যেই কিন্তু মাথাচাড়া দেয় বড় একটি ঝুঁকি। উৎসবের আবহ, কম দামে কেনাকাটার এই সময়ে ওৎ পেতে বসে থাকে বহু সাইবার অপরাধী। প্রায়শই যার ফাঁদে পড়ে মোটা অঙ্কে অর্থ খোয়া যায় অনেক ক্রেতারা। 


ফলে এই সময়েই বিভিন্ন অনলাইন প্রতারণা নিয়ে সতর্ক থাকতেই হয়। কিন্তু কীভাব? তা নিয়েই কিছু পরামর্শ দিয়েছে ট্রুকলার। সেগুলো কী কী?


অচেনা লগ-ইন, মেসেজ থেকে সাবধান:
অধিকাংশ ই-কমার্স ওয়েবসাইট সেখান থেকে কেনাকাটার জন্য ক্রেতাদের অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে বলে, যার মাধ্যমে তাঁরা কেনাকাটা করতে পারবেন। অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় ক্রেতাদের মেইল অ্যাড্রেস এবং ফোন নম্বর দিতে হয়। সেই ফোন নম্বর ও মেইল অ্যাড্রেসে বিভিন্ন অফারের আপডেট আসে। তার মাধ্যমেই অর্ডার দিতে হয়। অর্ডার দেওয়ার পরে সেই নম্বরের মাধ্য়মেই অর্ডার ট্র্যাক করা হয়। অনেকসময়েই প্রতারকরা এই অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য চুরি করে নেয়। তারপর ক্রেতার অজান্তেই সেই অ্যাকাউন্টে ঢুকে অর্ডার করে, সেটাও ওই অ্যাকাউন্টের পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করে। ফলে নিজের অ্যাকাউন্টে অসময়ে, অচেনা কোনও লগইন হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। তেমন দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে হবে।         
      
নিরাপদ ব্রাউজার ব্যবহার:
ইন্টারনেট যেমন নানা সুবিধা দেয়, তেমনই এতে লুকিয়ে থাকে নানা বিপদও। প্রতারকরা একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে। অনেকসময়েই এমন একটি লিঙ্ক পাঠানো হয় যা আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে হয়। প্রথম ঝলকে ফারাক বোঝাও যায় না। অনেকসময় গ্রাহকের কাছে একটি মেল আসে, যেখানে তাঁর পরিচিত ওয়েবসাইটের লোগো দেওয়া এমন একটি পেজ খোলে যা দেখে আসল বলেই মনে হয়। সেখানে লেখা থাকে, কোনও একটি অর্ডারের টাকা বাকি রয়েছে। তখন একটু ভাল করে URL দেখা উচিত। এই ক্ষেত্রে ওই ওয়েবসাইটে URL-এ অতিরিক্ত কোনও শব্দ থাকে অথবা কম শব্দ থাকে বা আসলের থেকে কিছু বদল থাকে। আসল ওয়েবসাইটে সবসময় 'https' দিয়ে শুরু হবে। এমন মেলের কোনও লিঙ্কে ক্লিক করা যাবে না। কারণ তাতে ক্লিক করলে অন্য একটি সাইট খুলে যাবে।   


ওটিপি-তে কড়া নজর:
টাকা চুরি করাই প্রতারকদের মূল লক্ষ্য। সারা ভারতে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলি টু ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে। আর্থিক প্রতারণা রুখতে সাহায্য করে এই মডেল। তবুও এই পদ্ধতি ফাঁকি দেওয়া সম্ভব, যদি গ্রাহক ওটিপি (OTP) শেয়ার করে। ফলে কেউ ফোন করে ওটিপি চাইলে তা একেবারই দেবেন না। নিজে কিছু করেননি অথচ আপনার কাছে ওটিপি এসেছে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন। সাধারণত কোনও ই-কমার্স ওয়েবসাইট বা ব্যাঙ্ক থেকে কখনও ফোন করে ওটিপি চাওয়া হয় না। ফলে ফোন এলেই সতর্ক হবেন।    


পেমেন্ট অপশন:
সহজে কেনাকাটা করার জন্য পরিচিত ওয়েবসাইটে অনেকসময় পেমেন্ট অপশন সেভ করার অপশন করতে হয়। তাহলে পরে সময় কম লাগে। দ্রুত অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু সুরক্ষার জন্য়ই কোনও কার্ড বা কোনও কিছুর তথ্য সেভ করবেন না। কখনও ফোন বা সাইটের তথ্য চুরি হলে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্যও চুরি হয়ে যেতে পারে। 


ভেরিফায়েড নম্বর:
ফোন নম্বর ঠিক কি না, তার জন্য একাধিক অ্য়াপ রয়েছে। ভুল নম্বর বা প্রতারকদের নম্বর হলে তা অনেকসময় তালিকাভুক্ত করা হয়। ফোনে তেমন অ্যাপ ব্যবহার করুন। তাহলে কোন নম্বর থেকে ফোন আসছে তা আগে থেকেই দেখে সতর্ক হতে পারবেন। বিদেশের কোনও নম্বর দেখলে পরিচিত না হলে সেই ফোন না ধরাই ভাল। ৮ বা ৯ ছাড়া অন্য কোনও সংখ্যা দিয়ে ফোন নম্বর শুরু হলে, সেক্ষেত্রেও সতর্ক হোন। ফোন ধরলেও ওটিপি, ব্যক্তিগত তথ্য, মেল অ্য়াড্রেস দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। 


প্রতারণা এড়ানোর জন্য সেই অর্থে কোনও প্রক্রিয়া নেই। এর অস্ত্র সতর্কতা। তাহলেই এড়ানো যাবে আর্থিক প্রতারণা।


আরও পড়ুন:  ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ সুযোগ, দাম বাড়ছে এই গাড়িগুলির