নয়াদিল্লি: বছর বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে সমারোহ। ঝকঝকে সবুজ গালিচায় দাঁড়িয়ে গালভরা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে কি আদৌ হেলদোল রয়েছে কারও? শতাব্দির উষ্ণতম বছরে যখন হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ মানুষ, সেইসময় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে রাষ্ট্রনেতাদের ভূমিকায় নিয়ে। এই তালিকায় ঢুকে পড়েছে ভারতও। কারণ গত পাঁচ বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে নজির গড়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ভারতের নামও রয়েছে। তাতেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, এই তীব্র দাবদাহে নুইয়ে পড়তে পারে ভারতের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডও।  


দাবদাহের প্রকোপ দেশের অর্থনীতিতেও!


পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত। অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এই মুহূ্র্তে হাঁসফাঁস করছে গোটা দেশ। এপ্রিলের বিশদ পরিসংখ্যান এখনও হাতে আসেনি, তবে এ বছর মার্চ মাসেই বিগত ১২২ বছরের রেকর্ড পার করে ফেলেছে ভারত। ১৯০১ সালের পর থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাসই উষ্ণতম বলে বিবেচিত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে খুব শীঘ্রই দেশের অর্থনীতির উপর এই আবহাওয়ার প্রভাব পড়তে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, যার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে।


২০২১ সালের ডিসেম্বরে নেচার জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, তীব্র দাবদাহ এবং তাপপ্রবাহের ফলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। তাতে প্রতিবছরে কমপক্ষে ১০ হাজার ১০০ ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, গোটা বিশ্বের তুলনায় যা সর্বাধিক। এতে কৃষকার্য এবং নির্মাণকার্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব প্রভাব পড়ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে গ্রীষ্মের দিনগুলিতে দুপুরের পর থেকে কাজ বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এর ফলে কাজের সময়সীমাও কমবে।


আরও পড়ুন: LIC IPO নিয়ে বড় খবর, এইদিন আসতে পারে আইপিও


আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘দ্য ল্যান্সেট’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তীব্র গরমে ২০২০ সালে কৃষিক্ষেত্রেই শুধুমাত্র ৬ হাজার ৭০০ কোটি ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত ২ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষের মাথাপিছু দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময়সীমাও তার জেরে কমেছে।


আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন (International Labour Organisation)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এ ভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ কৃষি, শিল্প, নির্মাণ এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে ঘণ্টার হিসেবে কাজের ক্ষতি হবে যথাক্রমে ৯.৪, ৫.২৯, ৯.০৪ এং ১.৪৮ শতাংশ হারে। দিনের বেলা কাজের সময় কমলে, প্রতি অর্থ বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (GDP) ২.৫ থেকে ৪.৫ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে।


তলিয়ে যাবে জিডিপি-ও!


আবার ২০২০ সালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ম্যাকিনজি সমীক্ষার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তীব্র দাবদাহে ২০৩০ পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাবদ ক্ষয়ক্ষতি ১৯.১৭ লক্ষ কোটি টাকায় ছুঁয়ে ফেলবে। প্রতিদিনের হিসেবে টাকার অঙ্কটা ৫ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। প্রতি ঘণ্টার হিসেবে ২২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি হবে ভারতের।


২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বৈশ্বিক উষ্ণতা যদি গড়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাতে কৃষিজ উৎপাদনে যেমন প্রভাব পড়বে, তেমনই বাড়বে সমুদ্রের জলস্তর, তাতে ভআরতের জিডিপি-র ৩ শতাংশ ডুবে যাবে বলে দাবি ওভারসিজ ডেভলপমেন্ট ইনস্টটিউট-এর। মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ভারতে চালের উৎপাদন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। ভুট্টার উৎপাদন কমতে পারে ২৫ থেকে ৭০ শতাংশ।