Manmohan Singh Passes Away : কম কথা বলতেন, কাজ করতেন অন্যদের থেকে অনেক বেশি। তাঁর আমলেই বোনা হয় ভারতের আর্থিক উন্নয়নের বীজ (Indian Economy)। দেশের অর্থনীতির দশা বদলাতে দিশা বাতলে দেন তিনি। তাতেও দেশের সমালোচকদের মন পাননি। তবে বিদেশের মাটিতে পেয়েছিলেন স্বীকৃতি। প্রয়াত প্রাক্তন  প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সিভি (Manmohan Singh CV) দেখলে অবাক হবেন।


এই ঘটনা অনেকেই জানেন না
২০০৫ সালের কথা। দক্ষিণ এশিয়ার কুয়ালালামপুরে আশিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই সময় আশিয়ানের সেক্রেটারি জেনারেলের পদে ছিলে অং কেং অং। সিংহকে ভরা সভায় বিশ্বের সবথেকে উচ্চশিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দেন অং। 'The Accidental Prime Minister: The Making and Unmaking of Manmohan Singh'- বইতে এই কথা উল্লেখ করেছেন লেখক সঞ্জয় বারু। এখানেই শেষ নয়। মনমোহনের কীর্তি নিয়ে রয়েছে আরও গল্পগাথা। তাঁর সিভি দেখে ঈর্ষা হতে পারে যেকোনও অর্থনীতিবিদের।


ভারতের উদার অর্থনীতির কারিগর ছিলেন তিনি, কী রয়েছে মনমোহন সিংহের সিভিতে
নয়ের দশকের গোড়ায় খাদের কিনারায় চলে যাওয়া ভারতীয় অর্থনীতিকে উদ্ধার করে, এক মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর সূচনাটা হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তিনি মনমোহন সিংহ...


১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, অধুনা পাকিস্তানের গাহ্-তে জন্ম মনমোহন সিংয়ের


১৯৪৮ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করলেন মনমোহন


১৯৫০-এ ইন্টারমিডিয়েটে হলেন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।


প্রতিটা কড়ির হিসেব রাখা সংসারে বড় হওয়া মনমোহন পছন্দের বিষয় ছিল অর্থনীতি


১৯৫২ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হলেন মনমোহন সিংহ। এবারও তিনি প্রথম স্থানে!


তারও ২ বছর পরে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এবং যথারীতি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।


সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় - কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি মনমোহন।  


মেধাবী মনমোহন স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি দেন ইংল্যান্ডে।


১৯৫৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জন্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে BA ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। 


তারপর ফেরেন দেশে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু করেন অধ্যাপনা।


১৯৬২-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ন্যুফিল্ড কলেজ থেকে D.Phil ডিগ্রি অর্জন করেন মনমোহন সিংহ।


অধ্যাপক জীবনে পড়িয়েছেন দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিকস, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  



সরকারে যোগের নিমন্ত্রণ আগেই এসেছিল
১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রকের অর্থনৈতিক পরামর্শদাতার দায়িত্ব নিলেন


পরের পছর হলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা।


১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ অবধি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টরের দায়িত্ব সামলান মনমোহন


ওই একই সময়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টরও ছিলেন।


১৯৭৬-এই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অলটারনেট গভর্নর ফর ইন্ডিয়া পদ অলঙ্কৃত করেন মনমোহন সিং


ওই একই সময়ে সামলেছেন ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বও


মনমোহন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের সচিব ছিলেন ১৯৭৬-এর নভেম্বর থেকে ১৯৮০ এপ্রিল অবধি।


একই সময়ে অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের অর্থনৈতিক বিষয়ক সদস্যও ছিলেন


১৯৮০’র এপ্রিল থেকে ১৯৮২-র ১৫ সেপ্টেম্বর অবধি প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য-সচিবের দায়িত্ব সামলান মনমোহন সিংহ


১৯৮২-র ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮৫-র ১৪ জানুয়ারি অবধি তিনিই ছিলেন আরবিআইয়ের গভর্নর।


১৯৮২ থেকে ৩ বছর, আইএমএফের বোর্ড অফ গভর্নরসে, অলটারনেট গভর্নর ফর ইন্ডিয়ার দায়িত্ব সামলান মনমোহন।


১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ অবধি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি।
 
১৯৮৫-তে ইন্ডিয়ান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন মনমোহন সিংহ।


সেই বছর ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৭-র ৩১ জুলাই অবধি প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হন তিনি।


১৯৮৭-র ১ অগাস্ট থেকে ১৯৯০-এর ১০ নভেম্বর - এই সময়ের মধ্যে জেনেভায় সাউথ কমিশনের সেক্রেটারি জেনারেল ও কমিশনারের দায়িত্ব সামলান মনহমোহন সিং!


১৯৯০-এর ১০ ডিসেম্বর থেকে পরের বছর ১৪ মার্চ অবধি তাঁকেই প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।


১৯৯১-এর ১৫ মার্চ থেকে ৩ মাস ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের চেয়ারম্যান পদ অলঙ্কৃত করেন মনমোহন সিং


এরপর তাঁকে সরাসরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনেন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও


১৯৯১’এর ২১ জুন থেকে ১৯৯৬-এর ১৫ মে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মনমোহন সিং।


১৯৯১-এর অক্টোবরে প্রথমবার রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন তিনি।


৯৫’এর জুনে সংসদের উচ্চকক্ষে পুনর্নির্বাচিত হন মনমোহন সিং।


এরপর ৯৬ থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার  আগে অবধি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের পরামর্শ দাতা কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।


মাঝে ১ বছর সংসদের বাণিজ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন মনমোহন সিং


১৯৯৮-এর ২১ মার্চ থেকে ২০০৪-এর ২১ মে অবধি রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন তিনি


২০০১-এর জুনে তৃতীয়বারের জন্য তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন



এরপর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ !


২০০৪ থেকে ২০১৪ - ১০ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান মনমোহন সিংহ। একের পর এক সাফল্য যেমন পেয়েছেন, যুগান্তকারী আইন পাস করিয়েছেন, তেমনই টুজি, কয়লা থেকে কমনওয়েলথ - একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ তাঁকে বিদ্ধ করেছে। তবে ক্ষমতায় এসে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেননি কেউ। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে শোনা যায় তাঁর বিষেয় ইতিবাচক মন্তব্য। মনমোহন সিংহ চলে গেলেন। কিন্তু এমন বাগ্মী-মিতবাক-রুচিশীল-মার্জিত রাজনীতিবিদের অভাব চিরকাল বোধ করবে ভারতীয় গণতন্ত্র।


Manmohan Singh Passes Away: FDI থেকে লাইসেন্স রাজ ! এই পাঁচ কারণে আজ মনমোহন সিংহের জয়ধ্বনি দিচ্ছে দেশ