কলকাতা: পুজোর আগে, একই দিনে রাজ্যের মন্ত্রী এবং হেভিওয়েট নেতার বাড়িতে হানা (Municipal Corporation Recruitment)। পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে হানা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (CBI)। সকাল থেকে সেখানে তল্লাশি চলল ফিরহাদ হাকিম এবং মদন মিত্রের বাড়িতে। সেই নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। আর সেই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন তৃণমূলের সাংসদ তথা অভিনেতা দেব। (Dev on CBI Raids)
পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে রবিবার একযোগে ১২ জায়গায় হানা দেয় CBI. এর তিন দিন আগেই এই মামলায় সক্রিয়তা দেখা গিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। এদিন সরাসরি ফিরহাদ এবং মদনে চেতলা ও ভবানীপুরের বাড়িতে হাজির হন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। পাঁচ ঘণ্টা পর শেষ নেশ মদনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
CBI-এর এই 'সারপ্রাইজ ভিজিট' নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিজেপি তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দিয়ে এসব করাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল। সেই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঘাটালের সাংসদ দেব বলেন, "কেউ যদি ভুল করে থাকে, তার শাস্তি হওয়া উচিত। আর যদি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য খারাপ। কারণ সারাজীবন কারও হাতে ক্ষমতা থাকবে না। অন্যরা যখন ক্ষমতায় আসবে, তারাও একই পন্থা নেবে, যা দেশের জন্য খারাপ।"
আরও পড়ুন: Firhad Hakim: ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে সিবিআই, কী কারণে মেয়রের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা?
ফিরহাদ-মদনের বাড়ি ছাড়াও এদিন আরও ১০ জায়গায় হানা দেয় CBI. দমদম, হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, কৃষ্ণনগর, নিউ ব্যারাকপুর, টাকিতে পৌরসভার বর্তমান এবং প্রাক্তন পৌরসভার চেয়ারম্যানদের বাড়িতেও হানা দেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। দমদম পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান হরেন্দ্র সিংহের বাড়ি, উত্তর দমদম পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ চক্রবর্তীর বিরাটির বাড়ি, কাঁচরাপাড়ায় তৃণমূলের প্রাক্তন পৌর প্রধান অসীম সাহার বাড়ি, নিউ ব্যারাকপুর পৌরসভার প্রাক্তন পৌর প্রধান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়ি এবং টাকি পৌরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতেও হানা দেয় CBI. তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
কেন্দ্রীয় সংস্থার একটি সূত্র মারফত জানা যায়, গত ১৯ মার্চ প্রোমোটার অয়ন শীলের সংস্থা ABS ইনফোজোনের সল্টলেকের অফিস থেকে, পৌরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত যে নথি পাওয়া গিয়েছিল, তাতে নাম ছিল অনেকের। এর পর ২১ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পৌরসভা নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্ত প্রয়োজনে বলে জানান। FIR দায়ের করে CBI তদন্ত করতে পারবে বলে জানান তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়ে ওই মামলা হাইকোর্টে ফেরত পাঠায়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে এই মামলা বিচারপতি অমৃতা সিন্হার এজলাসে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলার মতো নির্দেশ বদলায়নি।
গত ১২ মে বিচারপতি অমৃতা সিন্হা জানিয়ে দেন, পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে করবে সিবিআই। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এরপর ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। কিন্তু সেখানেও ধাক্কা খেতে হয় তাদের। সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়নি, বিচারপতি অপূর্ব সিন্হা এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ। পরে ওই মামলা, বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে পাঠান, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে নেমে ২০টি পৌর কর্তৃপক্ষকে নথি চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছিল ED। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ পৌরসভা নথি জমা দিয়েছে। কিন্তু সূত্রের দাবি, জমা পড়া নথি দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। এমনকী ৬-৭টি পুরসভা সম্পূর্ণ নথিও জমা দেয়নি বলে জানা যায়। সম্প্রতি ED-সূত্রে দাবি করা হয়, বিভিন্ন পুরসভায় অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন, এরকম দেড় হাজারের বেশি জনের নামের তালিকা তৈরি করেছে তারা।