কলকাতা: ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্নকাণ্ডে ফের সরব মহুয়া মৈত্র (Mohua Moitra)। 'সিবিআই বা এথিক্স কমিটির যে কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি। যখন ডাকবে তখনই যেতে রাজি। যদিও সেই এথিক্স কমিটিতে বিজেপি সাংসদরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।' সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর। 


ফের সরব মহুয়া মৈত্র: হিরানন্দানি গ্রুপের থেকে উপহারের বিনিময়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ উঠেছে মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে। যে অভিযোগ  তুলেছেন, তাঁরই প্রাক্তন বন্ধু অনন্ত জয় দেহাদ্রাই এবং বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। সেই হিরানন্দানি গ্রুপের সিইও দর্শন হিরানন্দানির সই সম্বলিত একটি হলফনামা সামনে এসেছে। যার পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন সাংসদ নিজেও। এদিন ফের প্রশ্নকাণ্ডে সরব হলেন তিনি।  'সিবিআই বা এথিক্স কমিটির যে কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুত। এথিক্স কমিটিতে বিজেপি সাংসদরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।' 


সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মহুয়া মৈত্রের প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। তিনি মহুয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠির ভিত্তিতে বিজেপি সাংসদ দুবে চিঠি দেন লোকসভার স্পিকারকে। মহুয়া মৈত্রর সাংসদ পদ খারিজ করার আবেদনও বিজেপি সাংসদ।দ্রুততার সঙ্গে স্পিকার বিষয়টি লোকসভার এথিকস কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার লোকসভার এথিকস কমিটি মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু ও বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে ডেকে পাঠিয়েছে।তার ঠিক আগে হিরানন্দানি গ্রুপের সিইও দর্শন হিরানন্দানির চাঞ্চল্য়কর বিবৃতি সামনে এনেছে সংবাদসংস্থা পিটিআই।


বিবৃতিতে দর্শন দাবি করেছেন, ২০১৭ সালে, বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের সময় তাঁর মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন মহুয়া বিধায়ক ছিলেন। কুকুরের মালিকানা নিয়ে যে প্রাক্তন বন্ধুর সঙ্গে মহুয়া মৈত্রর বিরোধ চলছে, কার্যত তাঁর এবং বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের অভিযোগকেই মান্য়তা দিয়ে দর্শন হিরনন্দানি দাবি করেছেন, মহুয়া মৈত্র অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খী এবং খুব দ্রুত জাতীয় স্তরে নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছিলেন। তাঁর বন্ধুরা তাঁকে পরামর্শ দেন, অল্প সময়ে নাম করতে হলে, নরেন্দ্র মোদিকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করতে হবে। কিন্তু, মোদির সরকারি নীতি হোক কিংবা ব্য়ক্তিগত জীবন, এতটাই নিখুঁত এবং দাগমুক্ত যে তাঁকে আক্রমণের কোনও সুযোগই ছিল না। তাই মহুয়া মৈত্রর ধারনা হয়, নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে গৌতম আদানি ও তাঁর গ্রুপকে আক্রমণ করা কারণ, দু-জনই একই রাজ্য গুজরাত থেকে এসেছেন। মহুয়া আদানির বিরুদ্ধে কিছু প্রশ্ন তৈরি করেন, যে প্রশ্নগুলো তিনি সংসদে তুলবেন, যাতে আদানি গোষ্ঠীকে নিশানা করে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলা যায়। সাংসদ হিসাবে মহুয়া মৈত্রর যে ইমেল আইডি, সেটাও তিনি আমাকে পাঠান, যাতে আমি তাঁকে আরও তথ্য দিতে পারি এবং তিনি সেগুলো সংসদে তুলতে পারেন। সেই প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে যাই। এখানেই থামেননি হিরানন্দানি গ্রুপের সিইও, কার্যত স্বীকারোক্তির সুরে তিনি এই দাবিও করেছেন, যে মহুয়া মৈত্র তাঁর সংসদের পোর্টালের লগ-ইন এবং পাসওয়ার্ডও তাঁকে দিয়ে দেন, যাতে প্রয়োজন হলে, তিনি মহুয়া মৈত্রর হয়ে সরাসরি প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।


তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেরও দাবি ছিল, মহুয়া সংসদের পোর্টালে তাঁর লগ-ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দর্শন হিরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন।সেই অভিযোগকেই কার্যত স্বীকৃতি দিলেন খোদ হিরানন্দানি গোষ্ঠীর সিইও, মহুয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাদের দিকেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে! এরইসঙ্গে বিজেপি সাংসদের অভিযোগকে আরও মান্য়তা দিয়ে হিরানন্দানি গোষ্ঠীর সিইও দর্শন বিবৃতিতে দাবি করেছেন, মহুয়া মৈত্র মাঝে মধ্যেই আমার কাছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চাইতেন এবং আমাকে সেগুলো তাঁকে দিতে হত। যেমন মূল্যবান জিনিস, দেশ-বিদেশের যাতায়াতের খরচ, ঘুরতে যাওয়ার খরচ, দিল্লিতে তাঁর সরকারি বাসভবন সংস্কারের খরচ। তাঁর না কি কখনও কখনও এটাও মনে হত, মহুয়া মৈত্র, তাঁকে এগুলো দিতে চাপ দিচ্ছেন, তাও তিনি করতেন! এমনটাও হলফনামায় দাবি করেছেন হিরানন্দানি গ্রুপের সিইও।

পাল্টা বিবৃতিতে মহুয়া মৈত্র দাবি করেছেন, ৩ দিন আগে হিরানন্দানি গ্রুপ অফিশিয়াল প্রেস বিবৃতি জারি করে জানিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অথচ, বৃহস্পতিবার যে “হলফনামা” সামনে এসেছে, তা সাদা কাগজে লেখা, কোনও লেটারহেডে নয়। এরই সঙ্গে কটাক্ষের সুরে মহুয়া মৈত্র আরও লিখেছেন,  চিঠির বিষয়বস্তু অত্যন্ত হাস্যকর। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এমন কেউ এটা লিখেছেন, যিনি বিজেপির আইটি সেলের হয়েও লেখেন। এই চিঠিতে আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের সঙ্গে এমন সবাইকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যারা সবাই মোদি ও গৌতম আদানির বিরোধী। নিশ্চয়ই কেউ বলেছে, “সবার নাম ঢুকিয়ে দাও। এরকম সুযোগ আর আসবে না” মহুয়া মৈত্র নিজের স্বপক্ষে আরও বলেছেন, দর্শন হিরানন্দানি নাকি আমার সব দাবি মেনে নিতেন, কারণ তিনি আমাকে ভয় পেতেন এবং আমাকে অখুশি করতে চাইতেন না। আচ্ছা, যাঁর বাবা দেশের এত বড় শিল্পপতি, যাঁদের প্রকল্পের উদ্বোধন করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী, যিনি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে বিদেশেও গেছেন, তিনি আমার মতো প্রথমবারের একজন সাংসদকে কেন ভয় পেতে যাবেন? এই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে পাঠানো হয়েছে এবং জোর করে সই করানো হয়েছে। এটা বিজেপি দ্বারা পরিচালিত গৌতম আদানির সরকারের পরিচিত মোডাস অপারেন্ডি। যতক্ষণ না গৌতম আদানি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, আমার আওয়াজ বন্ধ হবে না। এই দুষ্কৃতীদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে আমি যে কোনও মূল্য চোকাতে রাজি।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2023: রীতি মেনে ষষ্ঠীর কল্পারম্ভ, ঘট স্নান করিয়ে শারদোৎসবের সূচনা বেলুড় মঠে