অনির্বাণ বিশ্বাস: হেভিওয়েট তৃণমূল নেতাকে (TMC) হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এ বার বিজেপি ছেড়ে সেই তৃণমূলেই যোগ দিলেন আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar News) বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল (Suman Kanjilal)। রবিবার সন্ধেয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে জোড়াফুলের পতাকা হাতে তুলে নিলেন তিনি। আলিপুরদুয়ারে বিজেপি-র সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার সঙ্গে মতান্তরের জেরেই সুমন তৃণমূলে যোগ দিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই তত্ত্ব যে পুরোপুরি মিথ্যে নয়, তা বুঝিয়ে দিলেন সুমনও। 


জন বার্লার সঙ্গে মতান্তরের জেরেই সুমন তৃণমূলে যোগদান!


উত্তরবঙ্গে বিজেপি-র কোনও বড় নেতা তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। সেই মতোই এ দিন ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেকের দফতরে হাজির হন সুমন। সেখানে তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান অভিষেক। জোড়াফুলের পতাকা তুলে দেন হাতে। এর পরি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন সুমন। তিনি বলেন, "আমি মূলত জনপ্রতিনিধি। সেই হিসেবে আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা ছিল। মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছিলাম। তার রেশ ধরেই সৌজন্য আলোচনা হয়। আজও তাই হয়েছে।"


এত দিন বিভিন্ন মঞ্চ থেকে বিজেপি-র হয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করেছেন তিনি। আজ যখন তৃণমূলে এলেন, সেখান থেকে পুরোপুরি সমর্থন পাবেন কি? এই প্রশ্নের উত্তরে সুমন বলেন, "আজ যখন জনগণের কথা বলতে এসেছি, জেলা সভাপতিকে পাশে পেয়েছি। আলিপুরদুয়ার পৌরসভার চেয়ারম্যান, কর্মীরা রয়েছেন। মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে সহযোগিতা পাওয়া যায়। আশা করি আগামী দিনে আমিও পাবো।"


কিন্তু বিধানসভায় এতদিন বিরোধী হিসেবে রাজ্যকে আক্রমণ করে, কাল থেকে ট্রেজারি বেঞ্চে বসা কি আদৌ সহজ হবে! সুমনের বক্তব্য, "আমি আমার জায়গাতেই রয়েছি। বিধানসভায় মানুষের স্বার্থেই প্রশ্ন তুলেি। আগামী দিনেও মানুষের স্বার্থেই প্রশ্ন তুলব। কারণ বিধানসভায় এ ভাবে রাজনীতি হয় না। শপথবাক্য পাঠ করে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সেই শপথবাক্যের প্রতি সম্মান থাকবে। গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক ভাবে কাজ করে যাব।"


আরও পড়ুন: Panchayat Elections 2023: দরজা খুলেই দিলেন অভিষেক! বিজেপি থেকে তৃণমূলে সুমন কাঞ্জিলাল, চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আরও!


এর আগে, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক বার বিজেপি-র উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গিয়েছে অভিষেককে। তিনি দরজা খুলে দিলে, বিজেপি দলটাই উঠে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন। সুমনকি দিয়েই কি তাহলে সেই দরজা খোলার সূচনা হল! সুমনের কথায়, "দরজা-জানলা খোলার বিষয়ে কিছু জানা নেই আমার। মানুষের কাজই বরাবর আলোচনার বিষয় থেকেছে। গত দু'বছর ধরে করতে পারছিলাম না। মানুষ অসহায় হয়ে গিয়েছেন। কী করা যায়, কী ভাবে করা যায়, আলোচনা হল। কেন্দ্রের টাকা না আসায় বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। সকলে মিলে এ সব নিয়ে কাজ করা যায় কী ভাবে, তা নিয়েই আলোচনা হল।"


ক্ষমতার অলিন্দে থাকতেই সুমন তৃণমূলে গিয়েছেন বলে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিজেপি। কিন্তু তৃণমূলে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুমন জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে সরকারের সামনেই যাবতীয় আলোচনা তুলে ধরতে হয় তাঁদের। যাবতীয় কাজও হয় সরকারের মাধ্যমেই। সে ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করা কাম্য বলেই মনে করেন তিনি। আর বিজেপি যে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযোগ করছে, আগামী দিনে কাজের মাধ্যমেই তার জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন সুমন। 


জনের সঙ্গে মতান্তরের জেরেই সুমন বিজেপি ছাড়লেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সরাসরি সে নিয়ে জবাব না দিলেও, সুমন বলেন, "মতপার্থক্য কোনও বিষয় নয়। উনি যখন শপথবাক্য পাঠ করেছেন, সে ক্ষেত্রে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের ওঁর কাছে গুরুত্ব পাওয়া দরকার। দুঃখের বিষয়, গত দুই বছরে ওঁকে আমরা পাইনি। চা শ্রমিকেরা অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। প্রভিডেন্ট ফান্ডের সমস্যা রয়েছে। ওঁর  থাকা উচিত ছিল। এগুলি এড়ালে জনগণের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করা হয়।"


গত কয়েক বছরে, উত্তরবঙ্গে বিজেপি সংগঠন মজবুত করেছিল ভালই। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের অনেকেই পৃথক গোর্খাল্যান্ড অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবিতে সরব হয়েছেন লাগাতার। এ ব্যাপারে তাঁর অবস্থান জানতে চাইলে সুমন বলেন, "আমি বরাবরই বলেছি, সুস্পষ্ট নীতি থাকা দরকার। কখনওই কেন্দ্রীয় নেতারা বিভাজনের কথা বলেননি। অথচ স্থানীয় নেতারা বলেছেন। আমার মনে হয় এখানে দ্বিচারিতা হয়েছে। সুস্পষ্ট নীতি থাকা দরকার। এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে, প্রান্তিক মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করার রাজনীতি হওয়া কাম্য নয়। " 


সুমনের তৃণমূলে যোগদানের পর কি তাহলে উত্তরবঙ্গে বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি নড়বড়ে হয়ে পড়বে!


তিনি যে কাজ করতে পারছিলেন না, সে কথা নাকি মমতাকেও জানিয়েছিলেন এবং বরাবর সদর্থক বার্তাও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুমন। আলিপুর জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি, দালাচক্রের খপ্পরে মানুষের হয়রানির কা যখনই জানিয়েছেন, প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মমতা সদর্থক ভূমিকাই পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সুমনের তৃণমূলে যোগদানের পর কি তাহলে উত্তরবঙ্গে বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি নড়বড়ে হয়ে পড়বে! কোথাও কি মন পাল্টাতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের মানুষের! সুমনের বক্তব্য, "মানুষের মন সদা পরিবর্তনশীল। মানুষের কাছে হবে। সম্মান করতে হবে তাঁদের ভাবনাকে। মুখ্য়মন্ত্রী এ ব্য়াপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তাঁর এই প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই প্রভাবিত করবে সকলকে।"