আবির ইসলাম, বীরভূম: গাড়ি, কাটমানির পর এবার আরও একটা অভিযোগ। ফের অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক এক ব্যবসায়ী। ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা না তোলায় মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অভিযোগ বীরভূমের (Birbhum) রূপপুরের তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি কাজী নুরুল হুদার। যদিও অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছে তৃণমূল।


কী অভিযোগ: 
বীরভূমের রূপপুরের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি কাজি নুরুল হুদা বলেন, 'আমাকে তখন বারবার বলল, তোমাকেই তুলতে হবে। আমি একটু রেগেই গেলাম, রেগে গিয়ে আমি বললাম, তুই কয়লা খেয়েছিস, পাথর খেয়েছিস, বালি খেয়েছিস, পঞ্চায়েত সমিতি খেয়েছিস, জেলা পরিষদ খেয়েছিস, তাও তোর পেট ভরছে না? এতে যদি পেট না ভরে, আমাদের আর কিছু করার নেই।


তখন সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, কাকে এই কথা বলেছেন তিনি? তখন কাজি নুরুল হুদা বলেন, 'একদম সোজাসুজি কেষ্ট মণ্ডলকে, আমি এই কথাটাই বলেছিলাম।' বুধবার ফের জেল হেফাজত হওয়ার দিনেই অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে উঠল আরও এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ। এবার তাঁর বিরুদ্ধে তোলা তুলতে চাপ দেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন বীরভূমেরই তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি। 


কাজি নুরুল হুদা বলেন, 'পঞ্চায়েতের যে টাকা কন্ট্রাক্টরদের কাছ থেকে ১৩ পার্সেন্ট টাকার জন্য বলে, আমি তখন বললাম, আমি তুলতে পারব না। আপনি দায়িত্বটা অন্য কাউকে দিন, আমাকে তখন বারবার বারবার বলল, না এটা তোমাকেই তুলতে হবে। আমি বললাম আমি তুলব না। আমাকে বলল ৪ পার্সেন্ট টাকা অফিসে জমা দিতে হবে। ৪ পার্সেন্ট টাকা পঞ্চায়েত মেম্বার-প্রধানদের ভাগ করে দিতে হবে। আর বাকি টাকা তুমি যা করবে করো, তোমার নিজের। আমি তখন বললাম, আমি তাহলে বড় ডাকাত হয়ে গেলাম। আমি কিন্তু ডাকাতি করতে রাজি নই। যাই বল, তুমি কাউকে দায়িত্ব দেবে দাও, আমি কিন্তু করতে রাজি নই। তখন আমাকে পরিষ্কার বলল, যে ঠিক আছে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তুমি পঞ্চায়েত অফিসে যাবে না। বললাম ঠিক আছে যাব না।'


কে এই নুরুল হুদা:
১৯৯৮ সাল থেকে ২০২১ অবধি শান্তিনিকেতনের (Shantiniketan) রূপপুরের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন কাজি নুরুল হুদা। তৃণমূলের বীরভূম জেলা কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁরই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, অনুব্রত মণ্ডলের কথা অনুযায়ী টাকা তুলতে না চাওয়ায় তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেন অনুব্রত।


তারপর কী হল?
কাজি নুরুল হুদা বলেন, 'তার দু’দিন পরে আমার ঘরে পুলিশ পাঠিয়ে, মানে NDPS কেস যেটা বলে, সব থেকে মারাত্মক, সেই কেসটা আমার ছেলেকে এবং আমাকে পুলিশ তুলে নিয়ে চলে গেল রাত সাড়ে এগারোটার সময়। ওই কেস আমাদের দিয়ে দিল, আমরা ১ বছর জেল খাটলাম। সবাইকে এই কথাই বলে ও শুধু টাকা দিতে হবে। আমি রাজি হয়নি বলে আমার এই অবস্থা হল।'


এর আগে প্রকাশ্যে দলীয় সভা থেকে বিক্ষুব্ধদের গাঁজার কেস দিয়ে অ্যারেস্ট করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে শোনা গেছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। সম্প্রতি দুই ব্যবসায়ীও দাবি করেন, তাঁদের থেকে গাড়ি নেওয়ার পর অনুব্রত মণ্ডল তাঁদের গাঁজা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মাদক মামলায় ফাঁসানোর কিংবা হুমকি দেওয়ার অভিযোগের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।


আরও পড়ুন:দলের পদ পেতে দিতে হবে লক্ষাধিক টাকা! কাঠগড়ায় তৃণমূল বিধায়ক