পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: মুড়ি (Muri) খাওয়া নিয়ে রাঢ়বঙ্গের মানুষের বেশ কিছুটা দুর্নাম রয়েছে বাকি রাজ্যবাসীর কাছে। তা অবশ্য নিছকই মজার। অনেকেই বলেন বাংলার অন্য অংশের তুলনায় রাঢ়ের মানুষ মুড়ি খেতে বেশি পছন্দ করেন। তা সে সুনামই হোক বা দুর্নাম তাতে অবশ্য 'ডোন্ট কেয়ার' বাঁকুড়ার । অন্তত বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার (Bankura) কেঞ্জাকুড়া গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বরের মুড়ি মেলায় (Muri Mela) যারা এসেছেন তাঁরা দেখেছেন এই এলাকার মানুষ মুড়ি শুধু খান এমনটা নয়, তা রীতিমত উপভোগও করেন।
মুড়ি মেলার ইতিহাস
এই মেলা বা উৎসবের শুরু আজ থেকে প্রায় দু'শো বছর আগে। কথিত আছে ঘুরতে ঘুরতে এক সাধু কেঞ্জাকুড়া গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে থাকা এক নিম গাছের নিচে এসে আশ্রয় নেন। সেখানেই ধ্যান মগ্ন অবস্থায় তিনি সিদ্ধিলাভ করেন । তাঁর উদ্যোগেই পরবর্তীকালে দ্বারকেশ্বর নদের তীরে গড়ে ওঠে সঞ্জীবনী মা-র আশ্রম । সে সময় থেকেই মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে ওই আশ্রমে হরিনাম সংকীর্তনের আয়োজন হয়ে আসছে। সেই সংকীর্তন চলে মোট পাঁচ দিন। শেষ রাতে জমে ওঠে সেই হরিনাম সংকীর্তন।
কথিত আছে অতীতে দূর দূরান্ত থেকে নদী-জঙ্গল পেরিয়ে শেষ রাতের কীর্তন শুনতে অসংখ্য ভক্ত ভিড় জমাতেন সঞ্জীবনী মাতার আশ্রমে। সারা রাত ধরে কীর্তন শুনে সকাল বেলায় নিজেদের সঙ্গে আনা মুড়ি এবং দ্বারকেশ্বরের জল সহযোগে খেয়ে তাঁরা নিজের নিজের বাড়িতে ফিরে যেতেন। এক সময়ের সেই রীতিই এখন বদলে গেছে উৎসবে। হরিনাম সংকীর্তনের শেষ দিনে অসংখ্য মানুষ পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন নিয়ে ছুটে আসেন সঞ্জীবনী মাতার আশ্রম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদী চরে। সঙ্গে আনেন পাহাড় প্রমান মুড়ি , চপ , সিঙ্গাড়া , হরেক রকম মিষ্টি , মিঠাই , জিলিপি , পেঁয়াজ , কাঁচালঙ্কা , চানাচুর।
আরও পড়ুন, 'একটাও টাকা নিইনি', পার্থর আর্জি খারিজ করে ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ আদালতের
মুড়ি খেতে খেতেই চলে আড্ডা সঙ্গে মেলা দেখা। দুপুরে সঞ্জীবনী মায়ের আশ্রমের আয়োজনে মেলায় আসা সকলের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়। তা দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে সকলেই ফিরে যান নিজের নিজের বাড়িতে। প্রতি বছরের চেনা ছবির বিশেষ অন্যথা হল না বৃহস্পতিবারও। শুধু কেঞ্জাকুড়া নয় আশপাশের অন্তত চল্লিশটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দ্বারকেশ্বরের চরে এসে জমিয়ে মুড়ি খেলেন। দিনভর আড্ডা , গল্প গুজবের পর দুপুরে পাত পেড়ে খেলেন আশ্রমের খিচুড়িও ।