হাওড়া: চিরাচরিত রীতি এবং ঐতিহ্য মেনে মহাসপ্তমীর মহাপুজো অনুষ্ঠিত হল বেলুড় মঠে৷ আজ ভোরে মঙ্গলারতি শেষে বিভিন্ন উপাচার-সহ স্নানের পর নবপত্রিকাকে আনা হয় মণ্ডপে৷ তারপর প্রতিমার চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে পুজো শুরু৷ করা হয়েছে ভোগের আয়োজনও। আজ থেকে পুজোর ক’দিন সারাদিন খোলা থাকবে বেলুড় মঠ (Belur Math)।
সপ্তমীতে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিককে নিয়ে মা দুর্গা পিতৃগৃহে প্রবেশ করেন। ভোরে গঙ্গার ঘাটে নবপত্রিকা স্নানের পর দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় বেলুড়ে। তারপর শাস্ত্রমতে ষোড়শ উপচারে শুরু হয় সপ্তমীর পুজো।নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ন’টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা ন’টি পাতা নয়, ন’টি উদ্ভিদ।যা কিনা কৃষিপ্রধান বাংলার প্রতীক।এগুলি হল, কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মান ও ধান। কলাবাউকে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়।সপ্তমীতে এভাবেই প্রকৃতি আরাধনার মধ্যে দিয়ে শুরু মাতৃ বন্দনা।
চলতি বছরে বেলুড় মঠে ১২৩ তম দুর্গাপুজো হচ্ছে। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই নিষ্ঠার সহিত মানা হয় কিছি বিধি। জন্মষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো হয় বেলুড় মঠে। চলতি বছরেও তার অন্যথা হয়নি। গত ৭ সেপ্টেম্বর শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো হয়েছে বরাবরের রীতি মেনেই।মঠে ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে ২১ তারিখ, ২২ তারিখ এবং ২৩ অক্টোবর বেলুড় মঠে দুর্গা পুজো করা হবে। ২২ অক্টোবর রবিবার মহাষ্টমীতে পুজো শুরু হয় ভোর সাড়ে ৫ টায়। এবং মহানবমীতেও একই সময় পুজো শুরু হবে।
সপ্তমীতে উৎসবের সুর সপ্তমে। বেলা যত গড়াচ্ছে, মণ্ডপে মণ্ডপে তত বাড়ছে ভিড়। উৎসবে মাতোয়ারা বাংলা। উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতায় জনসমুদ্র। চারিদিকে আলোর রোশনাই। কোথাও থিমের চাকচিক্য, কোথাও সাবেকিয়ানা। নিষ্ঠাভরে উমা আরাধনা। শাস্ত্রমতে সপ্তমী থেকে পুজো শুরু৷ সপরিবারের মা দুর্গার পিতৃগৃহে প্রবেশ৷ সকাল থেকেই ঠাকুর দেখার ভিড়৷ নতুন জামাকাপড়৷ নতুন জুতো৷ হৈ-হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া৷ উত্সবের আনন্দে ভাসছে শহর। থিম, সাবেকিয়ানা, নান্দনিকতায় মিলে-মিশে উদযাপনের রঙ৷ বাঙালির সেরা উৎসব।
আরও পড়ুন, মহুয়া বিতর্কে জড়াতে চায় না TMC, বুঝিয়ে দিলেন কুণাল, অধীর বললেন..
প্রসঙ্গত, মহাপুজোয় মশগুল মহানগর। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পায়ে পায়ে সিগন্যাল গ্রিন। ভিড়ের চাপে যতই চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা হোক কিম্বা ঘেমেনেয়ে একশা হোক গিলে করা পাঞ্জাবি, থেমে নেই প্যাণ্ডেল হপিং। আপত্তি নেই লম্বা লাইনের দীর্ঘ প্রতীক্ষায়। বছরে তো এই ক’টা মাত্র দিন। রাজপথে মানুষের ঢল। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে জনস্রোত।আলো ঝলমলে শহরে ঠাকুর দেখার ঢল। থিম, সাবেকিয়ানা মিলেমিশে একাকার উৎসবের রঙ। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে সেই আমেজই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন শহরবাসী। সঙ্গে হুল্লোড়, আড্ডা, পেটপুজো। ফুচকা, রোল, চাউমিন।