সন্দীপ সরকার, উত্তর ২৪ পরগনা : সাদা কাগজে সই করে দিতেই তৈরি হয়ে যায় আধার কার্ড। ছিল মেয়ের জন্মের নথি, ছেলের মাদ্রাসায় পড়ার প্রমাণপত্র। স্বরূপনগর সীমান্তে এবিপি আনন্দর ক্যামেরার সামনে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন এক অনুপ্রবেশকারী। তাঁর আরও দাবি, বাংলাদেশে ফেরার আগে, ভারতে বানানো সব নথি জমা দিতে হয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে। যদিও এমন ঘটনা জানা নেই বলে দাবি করেছেন, জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিতা গায়েন।
বাংলাদেশ সাতক্ষীরার বাসিন্দা আল আমিন মোল্লা বলেন,ক্লাব থেকে বলেছে, তোমরা কোনও কাগজপত্র নিয়ে যেও না। সব কাগজপত্র দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে জমা দিয়ে এসেছি। এসেছিলেন খালি হাতে, ফিরতে হচ্ছে খালি হাতেই। বাংলাদেশে ফেরার জন্য় স্বরূপনগর সীমান্তে অপেক্ষারত এই বাংলাদেশি নাগরিকের মুখে উঠে এল চাঞ্চল্য়কর স্বীকারোক্তি! বাংলাদেশ সাতক্ষীরার বাসিন্দা আল আমিন মোল্লা বলেন, আমার আর আমার বউয়ের আধার কার্ড ছিল। দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে, আসার সময় নিউটাউনে দিয়ে এসেছি।আমি যদি এখান থেকে কোনও ডকুমেন্ট নিয়ে যাই সেটা বাংলাদেশে কাজে লাগবে না। বরং ওখানে আমি সমস্যায় পড়ে যাব। '
আল আমিন মোল্লা। বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা।দালাল ধরে ৫ বছর আগে নদী পেরিয়ে ভারতে ঢোকেন। স্ত্রী ও ছেলে সহ ৩ জনের জন্য দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। থাকতেন জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন নিউটাউনে।অনুপ্রবেশকারীর দাবি, সাতক্ষীরা থেকে ঘোজাডাঙা হয়ে আসেন নিউটাউন।৩ বছর পর সেখান থেকে চলে যান হাওড়ার শিবপুরে। 'SIR' শুরু হওয়ার পর দিন সাতেক আগে ফের চলে আসেন নিউটাউনে।
প্রশ্ন: আধার কার্ডটা হল কীভাবে?
আল আমিন মোল্লা, বাসিন্দা, সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ : গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকেরা এসেছিল বাড়িতে। বলল, তোমার বাড়িতে কতজন? আমি বললাম, চারজন। জিজ্ঞাসা করল যে, তোমাদের কোন কার্ড হয়েছে? আমি বললাম, কোনও কার্ড হয়নি। বলল, তোমরা কোন কার্ড বানাবে? আমি বললাম, তাহলে দেখুন যদি একটা আধার কার্ড বানিয়ে দিতে পারেন। ওরা একটা কাগজ দেয় তাতে আমি এবং আমার বউ সই করি। কাগজে কিছু লেখা ছিল না শুধু সাদা কাগজ ছিল। ক্লাব থেকেও বলেছিল তোমাদের যাদের কার্ড হয়নি তারা নাম দাও। সেই হিসাবে নাম দিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: কোন ক্লাব?আল আমিন মোল্লা, বাসিন্দা, সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ : মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ক্লাবটা দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে।
বাংলাদেশের নাগরিক আলি আমিনের বক্তব্য়, স্বরূপনগর সীমান্তে আসার আগে, পঞ্চায়েত অফিসে জমা দিতে হয়েছে সমস্ত ভারতীয় নথি। বাংলাদেশের বাসিন্দা আল আমিন মোল্লা বলেন, আমার যতগুলো কার্ড ছিল, আধার কার্ড, ছেলে আরবি মাদ্রাসায় পড়ত, ওখান থেকে একটা সার্টিফিকেট দিয়েছিল, মেয়েটা হাসপাতালে হয়েছিল সেখান থেকে একটা কাগজ দিয়েছিল, এতগুলো কাগজ আমি দু'নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে জমা করে চলে আসি। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে জ্যাংড়া-হাতিয়া়ড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রীতা গায়েনের দাবি, কোন পঞ্চায়েত সদস্য করে দিয়েছেন, তাঁর নাম কি বলেছেন? পঞ্চায়েতে কি আধার কার্ড তৈরি হয়? এরকম তথ্য আমাদের কাছে নেই। এই প্রথম শুনলাম। তাঁর আধার কার্ড নিয়ে যাবেন না রেখে যাবেন, সেট তাঁর ব্যাপার।' উত্তর ২৪ পরগনার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক ও জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য মহম্মদ আফতাব উদ্দিন বলেন, ক্লাব কোনওদিন আধার কার্ড দিতে পারে? ক্লাব কখনও কার্ড জমা নিতে পারে, ধরা পড়ে উল্টোপাল্টা বলছে। ক্লাবের উল্টোদিকের দোকানে এরকম হত। সে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশিদের কারও কারও কাছে ভারতের আধার কার্ড থেকে ভোটার কার্ড-রেশন কার্ড-লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার! কিন্তু কী করে এমনটা সম্ভব হল?