ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: বীরভূমে (Birbhum) কি এবার অনুব্রত জমানার পতন? জেলা পরিষদের পর এবার কর্মাধ্যক্ষ পদেও কাজল ঘনিষ্ঠদের দাপট। স্থায়ী সমিতি থেকে বাদ পড়লেন অনুব্রত অনুগামীরা। কর্মাধ্যক্ষ পদে নাম ঘোষণার পরেও পদত্যাগ করেন রবি মুর্মু ও নারায়ণ হালদার।'একজন তো সারা জীবন থাকতে পারে না, তাই এই পরিবর্তন', তৃণমূলের এমন প্রতিক্রিয়ায় কার্যত বিরোধীদের জল্পনাতেই মান্যতা।


গরু পাচার মামলায় দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। এই পরিস্থিতিতে কেষ্ট-বিরোধী কাজল শেখের হাতে গিয়েছে বীরভূম জেলা পরিষদের ব্যাটন। কর্মাধ্যক্ষ পদেও এবার কাজল-ঘনিষ্ঠদের দাপট। স্থায়ী সমিতি থেকে বাদ পড়লেন অনুব্রত-অনুগামী বলে পরিচিত দু’বারের জেলা সভাধিপতি ও সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, নারায়ণ হালদার ও আদিবাসী নেতা রবি মুর্মু। এমনকী, কর্মাধ্যক্ষ পদে নাম ঘোষণা পরেও, গতকাল পদত্যাগ করেন রবি মুর্মু ও নারায়ণ হালদার। জেলা পরিষদ আসনে প্রথমবার দাঁড়িয়েই ভোটে জিতে একেবারে সভাধিপতির চেয়ারে বসেছেন কাজল শেখ। তাঁর এই উত্থানকে অনুব্রত-জমানার পতন হিসেবেই দেখছে বিজেপি।


বীরভূমের জেলা পরিষদ সভাধিপতি এবং তৃণমূল জেলা কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ বলেন, 'নতুনরা চান্স পাবে না, পুরনোরাই থেকে যাবে? যে কাজ করবে, সেই স্থান পাবে। নতুন পুরাতন বলে কিছু নয়।' গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর, জেলায় ধাপে ধাপে গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত কাজল শেখের। প্রথমে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটি, তারপর জেলা পরিষদের প্রার্থী। প্রথমবার জয়ের পরই বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি। কাজলের আগমনে  সরানো হয়েছে দু'বারের জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীকে। 


এছাড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পদে অনুব্রত-অনুগামী বলে পরিচিত নারায়ণ হালদার ও আদিবাসী নেতা রবি মুর্মুর নাম ঘোষণার পরও, তাঁরা চিঠি দিয়ে সেই পদে না থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় গোষ্ঠীর বলে পরিচিত নুরুল ইসলামের। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বীরভূমের রাজনীতিতে কাজল শেখের উত্থানই কি তাহলে অনুব্রত মণ্ডলের পতনের শুরু?


যদিও এমনটা মানতে নারাজ খোদ বীরভূমের জেলা সভাধিপতি ও তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। তিনি বলেন, 'কে বলল? কে বলল অনুব্রতর টিম বাদ গেছে? অনুব্রত মণ্ডল মহাশয়ের টিমই বিভিন্ন জায়গায়, ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে, তাঁরাই প্রতিযোগিতা করেছে, তাঁরাই ভোট করেছে, তাঁরাই সামনে আছে।' কার নেতৃত্বে চলবে বীরভূমের প্রশাসন? কাজল শেখের বক্তব্য, 'জেলার অভিভাবক আছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে বীরভূম জেলা চলছে। টিম অনুব্রত ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট করেছে। আগামীদিনে তাঁদের নেতৃত্বেই চলবে।' কাজল শেখ যখন এ কথা বলছেন তখন, বীরভূম জেলায় দুয়ারে সরকারের একাধিক কর্মসূচিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে কাজল শেখের ছবি। কিন্তু কয়েক বছর আগেও, দেখা যেত এই ছবি! যেখানে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বড় করে ছবি থাকত অনুব্রতর।


বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, 'এই যে লড়াই, যত দিন যাবে তত সামনে আসবে। গুরুত্ব কাদের দেওয়া হবে, কাদের দেওয়া হবে না। নব্য আর পুরাতনের লড়াই হবে।' যদিও বিজেপির কটাক্ষকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। 


আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরের উপর নিম্নচাপ! বাংলায় আর কতদিন থাকবে বৃষ্টি?