ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা: বালিঘাটের দখল ঘিরে সংঘর্ষে সিউড়ির (Suri) বাঁশঝোড়ায় তৃণমূল সমর্থক (TMC Supporter) খুনে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সরব মৃতের পরিবার থেকে গ্রামবাসীরা। গাফিলতি মেনে পুলিশকে পদক্ষেপের জন্য কড়া নির্দেশ দিলেন পুরমন্ত্রী। যদিও এ নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা (opposition)। তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ-সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


শাসকের দখলদারিতে খুন?


রাজ্যের মন্ত্রী ও হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমের সফরের মধ্যেই, বীরভূমে কুপিয়ে খুন করা হল এক তৃণমূল সমর্থককে। বালিঘাটের দখল ঘিরে সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক তরতাজা যুবকের। অভিযোগ, যুবক খুনের পরও থামেনি অশান্তি। উল্টে সিউড়ির বাঁশঝোড় গ্রামে শনিবার রাতভর চলে বোমাবাজি। এমনকী বোমার শব্দ পৌঁছয়, ৪ কিলোমিটার দুরে সিউড়ি সার্কিট হাউসে থাকা মন্ত্রীর কানেও।


পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, 'সকালেও আমি বোমার আওয়াজ পেয়েছি। আমি বললাম ইমিডিয়েট রি-ইনফোর্সমেন্ট বাড়ান। অ্যারেস্ট করুন। ক্রিমিনাল ইজ ক্রিমিনাল।'


পঞ্চায়েত ভোটের আগে, সিউড়ির এই ঘটনায় আবারও তেঁতে উঠেছে লালমাটির জেলার রাজনীতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শনিবার রাতে ময়ূরাক্ষী নদীর ওপরে বালিঘাটের দখল ঘিরে সংঘর্ষ শুরু হয়, সিউড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূল নেতা কাজল শাহ ও স্থানীয় তৃণমূল কর্মী আতাই শেখের অনুগামীদের মধ্যে। অভিযোগ, দু’পক্ষের বোমাবাজির মধ্যেই, কুপিয়ে খুন করা হয় ২০ বছরের শেখ ফাইজুলকে। এদিন সকালেও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে তখনও পড়ে রয়েছে তাজা বোমা। এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল নেতা কাজল শাহ-র বিরুদ্ধে। 
  
মৃত শেখ ফাইজুলের বাবা শেখ মাফুজের বক্তব্য, 'ছেলে কোনও ঝামেলার মধ্যে ছিল না। সিউড়িতে সবজি হাটে কাজ করত। সেখানে যাচ্ছিল। সেইসময় কাজলের লোকজন একা পেয়ে খুন করে। কারণ কাজলের বেশ কিছু কাজে বাধা দিয়েছিলাম। তারই আক্রোশে আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমরা আতাই শেখের হয়ে কাজ করি।'


শনিবার রাতে সিউড়ি সার্কিট হাউসে দলীয় বৈঠক করেন ফিরহাদ হাকিম। সূত্রের খবর, তখন সেই চত্বরেই ছিলেন, বাঁশঝোড় গ্রামের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ কাজল শাহ। ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে তাঁর ছবিও সামনে এসেছে। 


ফিরহাদ হাকিমের কথায়, 'কালকে এখানে ৩০-৪০টা ছেলে ছিল। কে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছে, কে আমার নামে জিন্দাবাদ বলেছে, সেই দায়িত্ব কি আমার নাকি?'


পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ক্ষোভ উগড়ে দেন মৃতের আত্মীয় থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, 'পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মানুষ আতঙ্কে আছে।'


প্রশ্ন উঠছে, একজন মন্ত্রীর সফর চলাকালীন, খুন ও বোমাবাজির এই ঘটনা কি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়? ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, 'নিশ্চিতভাবে। কোনওরকমভাবে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। যারা ক্রিমিনাল, অ্যান্টিসোশ্যাল তাদের বুক করতে হবে, অ্যারেস্ট করতে হবে। কে আমার, কে তোমার, সরকার এটা দেখবে না। সরকার পুরোপুরি মানুষ যাতে শান্তিতে থাকে, আইনত যাতে বালি তোলা যায়, এগুলো যাতে বন্ধ হয় এখনই, তার ব্যবস্থা করবে। আমি সকালে এডিজি ল অ্যান্ড অর্ডারকে ফোন করেছিলাম।'


এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ কাজল শাহ-সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি শ্যাম সিংহ বলেন, '১৫ জনকে গ্রেফতার করেছি। মূল আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।'


আরও পড়ুন: Balurghat: ঘুড়ি নিয়ে ঝামেলার জেরে শিশু খুনের অভিযোগ, ধুন্ধুমার বালুরঘাটে

আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে: কাজল শাহ


অন্যদিকে, ধৃত মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা কাজল শাহ-র দাবি, 'আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব, পুলিশ কুকুর দিয়ে তদন্ত করা হোক। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। আমি ছিলাম না। ওরা নিজেরাই করেছে।'


ফের রক্তাক্ত বীরভূম। কড়া আক্রমণে বিরোধীরা। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, 'সমস্ত সমাজবিরোধীরা তৃণমূলের ঝান্ডা ধরে নেতা হয়ে গেছে।' তবে উত্তর দিয়েছে শাসকদল। ঘটনার পর থেকে এখনও থমথমে বাঁশঝোড় গ্রাম। চলছে পুলিশি টহল।