গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম: বাড়িতে পণের দাবিতে ফের গৃহবধূকে (Housewife) খুনের (Murder) অভিযোগ। শ্বশুরবাড়ির বাড়তি অর্থের লালসা বীরভূমে  (Birbhum) এক গৃহবধূর প্রাণ কাড়ল বলে অভিযোগ। ওই গৃহবধূকে খুনের অভিযোগ উঠল তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনা ঘটেছে বীরভূমের লাভপুরের কুরুন্নাহার গ্রামে। 


জানা গেছে, গত সাত মাস আগে বীরভূমের লাভপুরে কাজীপাড়ার  সিহিনা খাতুনের বিয়ে হয়  কাজীপাড়ারই কিছু দূরে কুন্নাগার গ্রামের  মনোজ শেখের সঙ্গে।


Hoogly theft: কেউ গিয়েছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ বেড়াতে, সুযোগ বুঝে হাউজিং কমপ্লেক্সের পরপর ফ্ল্যাটে চুরি


মৃত মহিলার বাবার বাড়ির লোকেদের অভিযোগ,  বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মেয়ের ওপর নানা জিনিসপত্র দাবি করে অত্যাচার চালাত তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনেরা। এমনকি কিছুদিন আগে তাঁরা সিহিনার স্বামীকে একটি মোটর বাইকও কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চাহিদা এতেও পূর্ণ হয়নি। তারপরও বন্ধ হয়নি তাঁদের মেয়ের উপর শারীরিক অত্যাচার। প্রায় সময়ই তাঁর মেয়েকে মারধর করা হত বলে অভিযোগ জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।


মৃত সিহিনার বাবার  অভিযোগ, তাঁর মেয়ের উপর প্রায় সময়ই তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অত্যাচার চালাত এবং আজ  মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনেরা তাঁর মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলে ঝুলিয়ে দিয়েছে দড়ি দিয়ে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।


 এই ঘটনার পর থেকেই মৃত মহিলার শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা বেপাত্তা। লাভপুর থানার পুলিশ গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।


উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই পণের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় স্বামী , শ্বশুর ও শাশুড়িকে দশ বছর কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত ।  বাঁকুড়া জেলা আদালতের এডিজে ফোর্থ কোর্টের বিচারক এই রায় দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া সদর থানার ভেদুয়া গ্রামে রুপা রায় নামের এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয় । পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় ওই মহিলার । এদিন আদালতে এই রায় শোনার পর স্বাভাবিক ভাবেই খুশি গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজন ।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় থানার কুশমা গ্রামের বাসিন্দা রুপা রায় ২০১৫সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন ভেদুয়া গ্রামের যুবক প্রদীপ রায়কে । বিয়েতে বাপের বাড়ি পণ না দেওয়ায় বিয়ের এক মাস পর থেকেই ওই গৃহবধূর উপর মানসিক নির্যাতন শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন । বাপের বাড়ি থেকে বারেবারে টাকা আনার জন্য চাপও দেওয়া হতে থাকে । বাপের বাড়ি প্রান্তিক চাষি হওয়ায় কোনওক্রমে চল্লিশ হাজার টাকা জোগাড় করে রুপার শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছেও দেন । অভিযোগ তারপরও একবিন্দু কমেনি নির্যাতন । বরং উত্তরোত্তর তা বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ । ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাপের বাড়ির লোকজন জানতে পারেন, ওইদিন রাত দশটার সময় ওই গৃহবধূর গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে । গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে । সেখানে তিনদিন লড়াই শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর । এরপরই স্বামী প্রদীপ রায় , শ্বশুর মানিক রায় , শাশুড়ি কাজল রায় ও নিকট আত্মীয় উত্তম রায় এর বিরুদ্ধে বাঁকুড়া সদর থানায় বধূ নির্যাতন ও বধূ হত্যার অভিযোগ দায়ের করে বাবার বাড়ির লোকজন । বিচার চলাকালীন মোট ২২ জনের সাক্ষীগ্রহণ করেন বিচারক । পরে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে নিকট আত্মীয় উত্তম রায়কে মুক্তি দিলেও স্বামী প্রদীপ রায় , শ্বশুর মানিক রায় ও শাশুড়ি কাজল রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত । এরপর ওই তিনজনের বধূহত্যার ধারায় ১০ বছর কারাদন্ড, ও বধূ নির্যাতনের ধারায় ২ বছর কারাদন্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ,অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাদন্ডের নির্দেশ দেয় আদালত ।