ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বীরভূম:  পদ্মশ্রী ( Padma Awards 2024 ) পেলেন বোলপুরের কাঁথাস্টিচ শিল্পী তকদিরা বেগম ( Takdira Begum ) । বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শিল্প মন্ত্রক থেকে ফোন করে তাঁকে এই পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়টি জানানো হয়। তাকদিরা সম্মতি দিলে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। 


আদতে পূর্ব বর্ধমানের  জয় কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা তকদিরা। প্রথাগত শিক্ষা দশম শ্রেণি পর্যন্ত।  স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছিলেন, আর এগোতে পারেননি লেখাপড়া। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ভাল লাগত সেলাই-ফোঁড়াই করতে। মায়ের কাপড় নিয়ে চুপিচুপি করতেন সেলাই । সেটাই যে কোনওদিন তাঁর পরিচয় হয়ে উঠতে পারে, ভাবেননি। 


বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলে আসেন বোলপুরের মাদ্রাসা পাড়ায়। এখনও সেখানেই তাঁর বাস। সেলাই-ফোঁড়াইয়ের নেশাটা রয়ে গিয়েছিল। আর সব সেলাইয়ের মধ্যে কাঁথা-স্টিচের কাজ তাঁকে বেশি টানত।  সেখান থেকেই কাঁথাস্টিচের কাজ করাকে পেশা করার ভাবনা মাথায় আসে। ছোট করে শুরু। কিন্তু তাঁর নিঁখুত সূচিকর্ম ও স্বাতন্ত্র্যর কথা প্রচার পেতে লাগল লোকমুখে। তারপর তা একদিন জেলা থেকে অন্য জেলা, রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পড়ল ছড়িয়ে। এখন তো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর কাছে কাজের বরাত আসে। এমনকি দুবাই, কাতার, আমেরিকা গিয়েছে তাঁর হাতের কাজ, সেসবই কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায়।  


তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার। মায়ের থেকে কাজ শিখে নিয়েছেন তাঁরাও। কাঁথাস্টিচের কাজই করেন, দিন যত গড়াচ্ছে, ততই জনপ্রিয়তা বাড়ছে কাঁথাস্টিচ শিল্পী তকদিরা বেগমের । মেয়েদের  বিয়ে হয়ে গেলেও মায়ের ছাতার তলায় একাগ্রভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরাও। মায়ের হাতের কাজ  আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাক, চান মেয়েরা। তাই  দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রীয় শিল্প মন্ত্রের প্রদর্শনীতে যোগ দেন প্রায়ই । তাঁরাও কাতার, দুবাই, আমেরিকা গিয়েছেন পসরা সাজিয়ে। 


বীরভূমের এই স্বনির্ভর শিল্পীকে এবার কুর্নিশ জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। এবার সর্বোচ্চ সম্মান পদ্মবিভূষণ দেওয়া হয়েছে ৫ জনকে। পদ্মভূষণ পেয়েছেন ১৭ জন, যার মধ্যে বাংলা থেকে রয়েছেন ৩ জন। পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকাতেও একধিক ক্ষেত্রে সম্মানিত পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্টরা। ১১০ জনের মধ্যে ৮জন পদ্মশ্রী প্রাপক এরাজ্যের বাসিন্দা।