ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: নানুরের পর খয়রাশোল (Khoyrasole)। স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক সুদীপ্ত ঘোষকে (Observer Sudipta ghosh) সরানোর পরেও আড়াল করা যাচ্ছে না  শাসকদলের ‘দ্বন্দ্ব’ (Inner Clash Of TMC)। সোমবার ব্লক সভাপতি বৈঠক ডাকলেও ১০জন অঞ্চল সভাপতি গরহাজির ছিলেন তাতে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনা বিরোধীদের অক্সিজেন দেবে না তো? জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।


কী নিয়ে বিতর্ক?
গত বিধানসভা নির্বাচনে খয়রাশোল ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ৬টিতেই বিজেপির তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে ছিল শাসকদল। জেলার মধ্যে একমাত্র হাতছাড়া হয় দুবরাজপুর বিধানসভা। এই বিধানসভার মধ্যেই রয়েছে খয়রাশোল ব্লক। এই অবস্থায় ঘরোয়া কোন্দল’ এতটাই বেড়েছে সেখানে যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত দলের নেতা থেকে কর্মীরা। শোন যাচ্ছে, জেলার নেতাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের  বৈঠকে খয়রাশোলের প্রসঙ্গ উঠতেই ব্লক সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী দলনেত্রীকে জানিয়ে ছিলেন, পর্যবেক্ষক হিসাবে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষের জন্য তাঁর ‘স্বাধীন ভাবে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এর পরেই মমতা সুদীপ্তকে খয়রাশোল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এই নিয়েই আপাতত টানাপড়েন। কারণ ১০টি অঞ্চলের মধ্যে সাতটির অঞ্চল সভাপতি ব্লক সভাপতির  বিরুদ্ধে গিয়ে সুদীপ্তকেই পর্যবেক্ষক রাখার আর্জি জানিয়ে সুব্রত বক্সিকে চিঠি দিয়েছেন। সোমবার ব্লক সভাপতি যে বৈঠক ডেকেছিলেন, তাতে ১০ জন অঞ্চল সভাপতি অনুপস্থিত ছিলেন। সব মিলিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব ফের জোরাল।


কী বলছেন ব্লক সভাপতি?
কাঞ্চন অধিকারির কথায়, 'এখানে কোনও বিরোধী নেই। তাই অঞ্চল সভাপতিদের মানুষের সব কাজেই থাকতে হয়। কয়েকজন এসেছিলেন। কয়েকজন আসতে পারেননি।' অল্প কথায় ঘরোয়া কোন্দলের জল্পনা উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। যদিও অঞ্চল সভাপতিদের অভিযোগ, ব্লক সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী তাঁদের সম্মান দেন না। তাই তাঁরা চান, সুদীপ্ত ঘোষ থাকুন। এমন পরিস্থিতিতে কোর কমিটির সদস্য তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, 'তিনি ব্লক সভাপতির সঙ্গে কথা বলবেন।' এই কোর কমিটিরই সদস্য সুদীপ্ত। তাঁকে সরানোর পর থেকেই টানাপড়েনের আঁচ পাচ্ছেন জেলার নেতারা। যদিও দুবরাজপুরের বিধায়ক অনুপ সাহার মতে, কেষ্টহীন-বীরভূমে নেতৃত্ব সঙ্কটে পড়েছে তৃণমূল। হালেই আবার বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ-সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন দলেরই সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি। শুক্রবার, বীরভূমের তৃণমূল নেতাদের দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই সতর্ক করে দিয়েছিলেন নানুরের তৃণমূল নেতা ও কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখকেও। কিন্তু সেই বার্তার পরেও পরিস্থিতির তেমন বদল হয়নি। ওই বৈঠকের পরের দিনই নানুরে দলের পার্টি অফিসের মধ্যেই অনুব্রত ঘনিষ্ঠ সংখ্যালঘু সেলের ব্লক সভাপতি রিঙ্কু চৌধুরীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। রবিবার কাজল শেখ, নানুরের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য-সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রিঙ্কু চৌধুরী।  যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি নানুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। তবে গোটা ঘটনা ঘিরে এমনিতেই অস্বস্তি লাল মাটির জেলায়।


আরও পড়ুন:'মেনে চলব' বাংলো খালির নির্দেশে পাল্টা বার্তা রাহুলের