দাঁতন: মহারাষ্ট্রের পর রাজস্থান, তার পর পালা বাংলার। কয়েক সপ্তাহ এমনই মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari)। তিনি যে বাংলায় সরকার ফেলার কথা বলছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে অবগত মানুষদের তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তবে কোনও রাখঢাক নয়, ডিসেম্বর মাসে বাংলায় সরকার পাল্টে গেলেও যেতে পারে বলে এ বার প্রকাশ্য মঞ্চে বলতে শোনা গেল বিজেপি-র (BJP) সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh)।
ডিসেম্বরে আবার বিধানসভা নির্বাচন পারে, দাঁতনে মন্তব্য দিলীপের
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur News) দাঁতনের (Dantan News) একটি সভায় এমনই মন্তব্য করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘ভোট হয়ত নেই এখন। তবে ডিসেম্বরের পরে হতেও পারে। বিধানসভার ভোটটা হতে পারে আবার। এই সরকারের কোনও ভরসা নেই। পদ্মপাতায় জলের মতো। এই আছে, এই নেই।’’
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ হোক বা গরুপাচার, অথবা কয়লা পাচার মামলা, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলায় সিবিআই এবং ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার সক্রিয়তা বৃদ্ধি নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছে শাসকদল তৃণমূল। ভোটের ময়দানে পেরে না উঠে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নিজেদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি পূরণ করতেই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে বলে দাবি করছে তারা।
সেই আবহে দিলীপের মন্তব্য আরও যথেষ্টই ইঙ্গিতপূর্ণ। কারণ এ দিন তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এই যে লুঠ, শেষের দিকে চলে এসেছে। ভাববেন না সিবিআই-ইডি(CB, ED) পুজোটা শান্তিতে দেখতে দেবে। অনেকের গণেশপুজো বিগড়ে গিয়েছে। অনেক বড় বড় গণেশপুজো হত। বড় বড় পেট। সেই গণেশপুজো আর নেই।’’
মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের প্রসঙ্গ তুলে কী ইঙ্গিত করছেন দিলীপ! তুঙ্গে জল্পনা
সরাসরি মমতাকে (Mamata Banerjee) নিশানা করে দিলীপ আরও বলেন, ‘‘দিদিমণির বিসর্জন হয়ে গেলে, ডিসেম্বরে ভোট হতেও পারে। আর ভোট করতে হবে না। ডিসেম্বরে এমনিতেই পড়ে যাবে সরকার। মধ্যপ্রদেশে হেরে যাওয়ার ছ’মাসের পর আমাদের সরকার হয়েছে। কর্নাটকেও আমাদের সরকার। আড়াই বছরের মাথায় মহারাষ্ট্রেও আমাদের সরকার এসেছে। তৃণমূল সরকারের দেড় বছর হয়ে গিয়েছে। অনেক হয়েছে। এ বার বাড়ি যাও। লাইনে রয়েছে বিজেপি। আমার মনে হয়ে আর নির্বাচন করতে হবে না। সরকার এমনিই হয়ে যাবে।’’
এর আগে, ২০২১ সালে বাংলায় সরকার গড়ার লক্ষ্য নিয়েই নেমেছিল বিজেপি। বাংলায় ২০০-র বেশি আসন পাকা বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন খোদ অমিত শাহ। কিন্তু ভোটের ফলাফল বেরোতে ৭৭-এই দৌড় থেমে যায় গেরুয়া শিবিরের। তার পর থেকে পৌরসভা নির্বাচন থেকে উপনির্বাচন, সবেতেই ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। বাবুল সুপ্রিয়, জয়প্রকাশ মজুমদাররা একে একে তৃণমূলে এসে উঠেছেন।
দলত্যাগী ওই নেতাদেরও এ দিন কটাক্ষ করেন দিলীপ। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দল ছেডে় ওদিকে গিয়েছে ক’টা বিধায়ক। সব ব্যাটা দেখবেন সুদ সমেত ফিরে আসবে। বলবে, পাঁচ পিস এনেছি দাদা, আমাকে চেয়ারম্যান করে দিন। কেউ বলবে, আমি ন’পিস এনেছি, মন্ত্রী করে দিন আমাকে। সব দেখবেন মুরগি ধরে আনবে।’’
দিলীপের এই মন্তব্যকে যদিও গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁর কথায়, ‘‘উনি নিজের দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এখন এ সমস্ত বিপ্লবী কথাবার্তা বলে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে চাইছেন। ওঁর কথায় গুরুত্ব দেওয়ার কারণ নেই। তবে এটা সত্য যে, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, গোয়া, মণিপুর এবং সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে ঘোড়া কেনাবেচা করে মানুষের রায়ে নির্বাচিত সরকার ফেলে নিজেরা ক্ষমতা দখল নিয়েছে। এখন ঝাড়খণ্ডে ঘোড়া কেনাবেচা করে সরকার গড়ার চেষ্টায় রয়েছে। কিন্তু বাংলার ৮ কোটি মানুষ কেন্দ্রের জনবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: Jay Prakash Majumdar: 'সাধু সাজছে বিজেপি', দিলীপের মঞ্চ থেকে মহিলাকে মারের ঘটনায় বিস্ফোরক জয়প্রকাশ
সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী দিলীপের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘তৃণমূলের সরকার এখন যে ভাবে চলছে, সেটা যে খুবই বিপজ্জনক জায়গায়, সে ব্যাপারে কোও সন্দেহ নেই। সরকার নিজে, উপরতলার নেতারা এমন ভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছেন, বলার নয়। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর পাশের চেয়ারে কে বসবেন, লোক পাওয়া যাচ্ছে না। বাকিরা বুঝে গিয়েছেন, বসলেই পার্থ হতে হবে। তাই দূরত্ব বজায় রাখছেন। কিন্তু দিলীপ যা বলছেন, তা স্বৈরাচারী কণ্ঠস্বর। ক্ষমতা আছে, জোর করে দখল করব। ঠিক দিল্লিতে ওঁরা যা করেন। যেমন পৌরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল দখলের রাজনীতি করে। কিন্তু তৃণমূলের চিটফান্ডের, নারদ কাণ্ডের নেতাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল! কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না সিবিআই-ইডি!’’
দিলীপের আগে, অগাস্ট মাসে শুভেন্দুকেও একই কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘সবে তো মহারাষ্ট্র হয়েছে। এর পর ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান হবে। তার পর বাংলায় পৌঁছব আমরা। চিন্তার কোনও কারণ নেই। এই সরকারকে রাখা যাবে না।’’ তাই বিজেপি নেতৃত্বের এই মন্তব্যের নেপথ্যে রাজনৈতিক পরিকল্পনা কাজড করছে কি না, উঠছে প্রশ্ন।