ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, পার্থপ্রতিম ঘোষ, আবীর দত্ত ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, হাওড়া : সপ্তাহের মাঝের কাজের দিন। আর পাঁচটা দিনের মতো শহরতলি থেকে ট্রেন ধরে এসে কলকাতায় কাজে পথে পা বাড়াবেন বলেই ভেবেছিলেন ওঁরা। কিন্তু সাঁতরাগাছি স্টেশনে (Santragachi Staion) নামতেই কার্যত চক্ষু চড়কগাছ। একদিক থেকে ক্রমাগত উড়ে যাচ্ছে ইট, পাথর। অন্য দিক থেকে উড়ে আসছে কাঁদানে গ্যাস, লঙ্কা গ্যাসের শেল। যে পথ ধরে সাঁতারাগাছি স্টেশন থেকে বের হন যাত্রীরা, সেই রাস্তা যেন কার্যত যুদ্ধক্ষেত্র। ইট, পাথর, লাঠি, চটিতে ছয়লাপ। প্রাণভয়ে চেনা রাস্তার বদলে ত্রস্ত যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়েই লোহার বিম টপকে যা হোক করে পেরোচ্ছেন রাস্তা। বিজেপির নবান্ন অভিযান (BJP Nabanna Abhijan) ঘিরে সাঁতরাগাছি স্টেশনে তৈরি হওয়া রণক্ষেত্রের চেহারায় এমনই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হল নিত্যযাত্রীদের। চরম বিপাকে পড়ে কার্যত সাঁতরাগাছি স্টেশন চত্ত্বর ছেড়ে পালানোর রাস্তা খুঁজলেন তাঁরা।


রণক্ষেত্র কোনা এক্সপ্রেসওয়ে


বিজেপির নবান্ন অভিযানের শুরুতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথমে সাঁতরাগাছিতে পুলিশের গার্ড রেল টপকানোর চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। এরপর পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় কাচের বোতল, ইট, পাথর, বাঁশ। গার্ড রেল ভাঙার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয় পুলিশের কিয়স্ক। পাল্টা জল কামান ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ (Police)। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস (Tear Gas)। লাঠি উঁচিয়ে বিজেপি কর্মীদের তাড়া করে পুলিশ। রাস্তায় ফেলে মারা হয় এক বিজেপি কর্মীকে। অন্যদিকে, হাওড়া ময়দানের কাছে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেন বিজেপি কর্মীরা। 


পিছু হঠে পুলিশ


দীর্ঘক্ষণ ধরে খণ্ডযুদ্ধ চলার পরও পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনতে পারেনি পুলিশ। সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ও পাশের নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে পাথর ভেঙে এনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছুড়তে থাকেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের হাতে দেখা যায় গুলতিও। পুলিশ পাল্টা ইট ছোড়ার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়, ছোড়ে লঙ্কা গ্যাসও। কিন্তু দীর্ঘক্ষণের চেষ্টাতেও কোনও কাজ হয়নি। বরং বিজেপি সমর্থকদের বিভিন্ন দিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত পাথর-ইটবৃষ্টির চোটে পিছু হঠতে বাধ্য হয় পুলিশ। সেই সময় কিছুটা বিরতি নেওয়ায় এগিয়ে আসেননি বিজেপি সমর্থকরাও (BJP Workers)। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় পুলিশের ব্যারিকেডের (Barricade) কাছে এসে পৌঁছয় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের একটি বাহিনীভর্তি বাস। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে এড়ানো যায়, সেই চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু গোটা পরিস্থিতির মাঝে রাস্তায় বেরোনো সাধারণ নিত্যযাত্রীদের পড়তে হয় চরম বিপাকে।



আরও পড়ুন- স্টেশনের কাছে জমায়েত, পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত সাঁতরাগাছি