কলকাতা : বাংলায় দ্য কেরালা স্টোরির (The Kerala Story) প্রদর্শন ব্যান হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) নিশানা শুভেন্দু অধিকারীর। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ট্যুইটে লিখেছেন, যতদূর জানি, কেরলে কীভাবে মৌলবাদী ধর্মগুরুরা মহিলাদের মগজধোলাই করেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি। এখানে দেখানো হয়েছে, কীভাবে কেরলে মহিলাদের ধর্মান্তরিত করে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠন ISIS-এর হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। এই ছবিটি ISIS এবং তার জঙ্গি কার্যকলাপের বিপক্ষে।


শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ISIS-এর প্রতি সহানুভূতিশীল ? শুভেন্দুর প্রশ্ন, এই ছবি দেখানো হলে পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা কেন বিঘ্নিত হবে ? ছবি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। অথবা, যদি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হন, তাহলে পদত্যাগ করা উচিত। মনে রাখতে হবে, কেরল হাইকোর্ট এই ছবির প্রদর্শনে স্থগিতাদেশ জারি করতে অস্বীকার করেছে। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী শাবানা আজমির (Shabana Azmi) ট্যুইটের প্রসঙ্গ টেনে তিনিও যে এই ছবির প্রদর্শনে সমর্থন জানিয়েছেন, তা উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।


তৃণমূল (TMC) সরকারের আমলে এই প্রথম সরকারিভাবে কোনও ছবির প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সোমবার নবান্নে 'দ্য কেরালা স্টোরি'র বিরুদ্ধে জাত-পাতের রাজনীতির পাশাপাশি কোনও একটি সম্প্রদায়কে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যারপরই দ্য কেরালা স্টোরি' নিষিদ্ধ করার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তামিলনাড়ুতে (TamilNadu) আগেই ছবির প্রদর্শন বন্ধ রেখেছেন মাল্টিপ্লেক্সের মালিকরা। আর এবার, পশ্চিমবঙ্গে 'দ্য কেরালা স্টোরি' ছবি নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে জল গড়িয়েছে রাজনীতির ময়দানে। একের পর এক ট্যুইটে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিজেপি নেতারা। ছবি নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ। দু-দিন আগেই কর্ণাটকের ভোট-প্রচারে 'দ্য কেরালা স্টোরি'র প্রশংসা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendrs Modi)।


এর আগে বারেবারে শাসকের রেষানলে পড়ে সিনেমা। ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্য়মন্ত্রী তখন আমদাবাদ সহ গুজরাতের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষয়ী হিংসার প্রসঙ্গ থাকায়, BBC-র তথ্যচিত্র 'ইন্ডিয়া দ্য মোদি কোয়েশ্টেন' নিষিদ্ধ করে মোদি সরকার। এর আগে গুজরাতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল পরজানিয়া এবং ফিরাক-এর মতো ছবি। গুজরাতে মুক্তি পায়নি আমির খান ও কাজল অভিনীত ফনা। শুধু কেন্দ্র নয়, রাজ্যেও এই উদাহরণ রয়েছে। বাম আমলে ২০০৬-এ নন্দনে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘হারবার্ট’-এর প্রদর্শনের অনুমতি নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ দু’হাজার একেও একইভাবে চলচ্চিত্রের ওপর নেমে এসেছিল শাসকের খাড়া ৷ সেবার আলেকজান্ডার সকুরভের ছবি টরাসের প্রদর্শনে আপত্তি জানিয়েছিলেন বিমান বসু৷ লেনিনকে হেয় করা হচ্ছে অভিযোগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল একটি সংগঠন৷ নিট ফল ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছিল ৷


আরও পড়ুন- হুড়মুড়িয়ে ছিঁড়ে পড়ল নার্সিংহোমের লিফট, কসবায় গুরুতর আহত চিকিৎসক, মৃত্যু স্ত্রীর


1975 সালে জরুরি অবস্থার সময় কিসসা কুর্সি কা ছবির মুক্তিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল । বলা হয় এর নেপথ্য়ে ছিলেন সঞ্জয় গান্ধী সেই ছবি কোনওদিন মুক্তির মুখ দেখেনি। জরুরি অবস্থার সময় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল গুজলাজ পরিচালিত সুচিত্রা সেন ও সঞ্জীব কুমার অভিনীত বিখ্য়াত ছবি আঁধি। জনতা সরকার ক্ষমতায় আসার পর আঁধি মুক্তি পায় এবং সুপারহিট হয়।


আরও পড়ুন- অসময়ে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা এড়াতে কী কী করবেন এবং কী কী করবেন না