সুনীত হালদার, হাওড়া: প্রেমিকার বিয়ে (marriage) ঠিক হয়েছে অন্যত্র। খবর পাওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে অবসাদগ্রস্ত হতে শুরু করে প্রেমিক। আর তারপরেই হঠাৎ চরম সিদ্ধান্ত নেয় সে। গতরাতে আত্মহত্যা (Suicide) করে প্রেমিক। খবর পেতেই প্রেমিকার বাড়িতে চড়াও হয় প্রেমিকের বাড়ির লোকজন।
প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ, আত্মহত্যা প্রেমিকের
প্রেমিকার বিয়ে অন্যত্র ঠিক হয়ে যাওয়ায় অবসাদে আত্মহত্যা প্রেমিকের। গতকাল রাতে প্রেমিক ২৭ বছর বয়সী জাহিরউদ্দিন শেখ হায়দরাবাদে আত্মহত্যা করেন। এই খবর রাতেই ডোমজুড়ের কলোড়া মধ্যপাড়ায় প্রেমিকের বাড়িতে পৌঁছায়। এরপর প্রেমিকের বাড়ির ক্ষুব্ধ লোকজন এবং গ্রামবাসীরা প্রেমিকার বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুঠপাট চালায় বলে অভিযোগ। বাদ যায়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িও। পরে ডোমজুড় থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় প্রেমিকের বাড়ির লোকজন ডোমজুড় থানায় মেয়ের দাদার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা শুরু করেছে।
ডোমজুড়ের কলোড়া মধ্যপাড়ার বাসিন্দা শেখ জাহিরউদ্দিনের সঙ্গে পাশের গ্রাম নতিবপুরের মেয়ে বছর কুড়ির এক মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক মাস তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে। কর্মসূত্রে জাহিরউদ্দিন হায়দরাবাদে একটি সোনার দোকানে কাজ করতেন। সেখান থেকে মাঝে মাঝে মেয়েটির সঙ্গে ফোনে কথাও বলতেন। এই নিয়ে মেয়েটির দাদা শেখ সফিউদ্দিন আপত্তি জানায় বলে অভিযোগ। তিনি ফোনে জাহিরউদ্দিনকে নানাভাবে হুমকি দিতেন যাতে তাঁর বোনের সঙ্গে সে কোনও সম্পর্ক না রাখেন। গত রবিবার মেয়েটির পরিবারের লোকজন অন্যত্র তার বিয়ে ঠিক করেন। বিয়ের কেনাকাটাও শুরু করে পরিবার। জানা যাচ্ছে এই খবর জাহিরউদ্দিনের কাছে পৌঁছলে গতকাল রাতে সে নিজের ফ্ল্যাটে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
জাহিরউদ্দিনের মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই তার পরিবারের লোকজন এবং গ্রামবাসীদের একাংশ মেয়েটির বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। এমনকী বিয়ের জন্য তৈরি সোনার গয়না, কাপড়, জামা এবং টাকাপয়সাও লুঠ করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পাশাপাশি গ্যাস সিলিন্ডার খুলে বাড়িতে আগুন লাগানো হবে বলে হুমকি দেয় লোকজন, অভিযোগ এমনটাও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ডোমজুড় থানার পুলিশ। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপরই গ্রামবাসীরা চড়াও হয় কলোড়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বাড়িতে।
সেখানে ইটপাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বাড়ির পাশাপাশি স্কুটারে ভাঙচুর করা হয়। সেখানেও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। জাহিরউদ্দিনের পরিবারের লোকজন মেয়েটির দাদা শেখ শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে ডোমজুড় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee : কর্মিসভার মাঝে অসুস্থ কর্মী, বক্তব্য থামিয়ে জলের বোতল নিয়ে ছুটলেন মুখ্যমন্ত্রী
কী বলছে মেয়েটির পরিবার?
তবে মেয়েটির মা জানিয়েছেন, তাদের মেয়েকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত ওই ছেলেটি। তাই গত রবিবার অন্য জায়গায় মেয়ের বিয়ের পাকা দেখা হয়। এমনকী বাড়িতে সোনার গয়না এবং দামি কাপড় কেনাকাটা করে রাখা ছিল। অভিযোগ, গতকাল রাতে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালায় জাহিরউদ্দিনের পরিবারের লোকেরা। প্রেমিকার মা বলেন, 'মেয়েকে বিরক্ত করত। রবিবার ওর বিয়ের পাকা দেখা হয়। গতকাল রাতে এসে ভাঙচুর করে। আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল।'
তবে জাহিরউদ্দিনের পরিবারের লোকজন মেয়েটির সঙ্গে তাদের ছেলের সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেন। প্রেমিকের বাবা বলেন, '২ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমাকে বিয়ের কথা বলল। বললাম তোমার পছন্দ হলে দেখ। কিন্তু মেয়ের পরিবার না করে দিয়েছিল।' প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ে অন্যত্র ঠিক হয়ে যাওয়ায় অবসাদে আত্মহত্যা করেছে জাহিরউদ্দিন। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন এটা একেবারে ব্যক্তিগত ব্যাপার। তিনি চেয়েছিলেন বসে মিটিয়ে দিতে। কিন্তু যেভাবে তাদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ডোমজুড় থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। পঞ্চায়েত প্রধান নিলুফা বেগম বলেন, 'আমার কাছে এসেছিল। আমি বলেছি মিটিয়ে দেব। এদিকে আমার বাড়িতেও ভাঙচুর করেছে।'