কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya Update) ছোট্ট দু'কামরার ফ্ল্যাটেই তাঁর জগত। বই পড়ার অভ্যাস বরাবরের। তাঁর ঘর জুড়ে থরে থরে সাজানো বই। এখন দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ায় নিজে পড়তে পারেন না। শোনাতে হয় বই, কাগজ পড়ে। জানালেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য (Mira Bhattacharya Exclusive)। এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বুদ্ধ-জায়া বললেন, কোনও দিন ঘর বদলের কথা মনেই হয়নি। 


এখন কেমন দিনযাপন? 


গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে আশার কথা, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। আর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতেই রাজ্য রাজনীতিতে যে ব্যতিক্রমী ছবিটা আবার ধরা পড়ল, তা হল নীতি-আদর্শ ভিন্ন হলেও, এখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আলাদা ভাবেই দেখেন বিজেপি, কংগ্রেস সহ এমনকী তৃণমূলের একাংশের নেতারাও। এই প্রসঙ্গে অনেকের মুখে বারবার ঘুরেফিরে আসছে, একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাদামাটা জীবনযাপনের কথা। ৫৯এ, পাম অ্যাভিনিউ, যে ফ্ল্যাটের বাইরে এখনও সেই পুরনো লেটার বক্স। প্রাক্তন হয়ে গেলেও, লেটার বক্সের উপর আজও সাঁটানো আছে সেই পুরনো কাগজ। যেটা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন লাগানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকে আজ প্রাক্তন হয়েও এই দুকামরার ফ্ল্যাটেই থাকেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য।

হাল আমলের গতিপথে শুধুই দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এমনই একটা সময় ছোট্ট ঘরেই বাস প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীর। গৃহকর্তার নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি। দেওয়াল জুড়ে কাল মার্কস, লেনিন, রবীন্দ্রনাথ, কাকা সুকান্ত ভট্টাচার্যর ছবি। সঙ্গে রয়েছে সারি সরি বই। ছোট স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে একটা খাটেই ঘুমান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আগে ছোট চৌকি ছিল, সেটা বদল করে চিকিৎসার স্বার্থে আনা হয়েছে খাট। আলমারি ভর্তি বই, পড়াশোনা নিয়েই থাকতে ভালবাসেন বরাবরই। তবে এখন দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, কেউ পড়ে দিলে উনি শোনেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁকে শোনাতে হয়, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়েছে।’’

দেওয়াল জুড়ে নানা ছবি। একদম অল্প বয়সের ছবি থেকে রয়েছে বিয়ের পর ভট্টাচার্য দম্পতির ছবি। একেবারে ছিমছাম ঘর, একটা টিভি, রেডিও। অক্সিজেনের নল আছে। মোনালিসা, রবীন্দ্রনাথ, পিকাসোর ছবি। বাবা-মায়ের ছবি। একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কী সাধারণভাবে থাকেন। পরিবার সূত্রে খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও তাঁকে এই ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র যেতে বলেছিলেন। কিন্তু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখান থেকে যেতে চাননি। মীরা ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও দিন চেঞ্জ করার কথা মনে হয়নি। উনি চেঞ্জ করতে চাননি।’’

দল ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রীত্ব হারিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। তবে তারপরও এই পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট থেকেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভোট দিতে যেতে তিনি। তবে শেষ সেই ছবি দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল, বিধানসভা নির্বাচনের দিন। আমরা চাই এই স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে আবার ফিরুন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সাবলীল জীবনযাপন করুন। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন বুদ্ধদেব।


আরও পড়ুন: Buddhadeb Bhattacharya : 'আমাকে হাত নাড়লেন, ভালই আছেন' হাসপাতালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে এসে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী