মুন্না আগরওয়ালা, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর: দেবী দুর্গার ডানদিকে গণেশ থাকেন। বাঁ দিকে থাকেন কার্তিক। সেভাবেই পুজো হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ নাকি একদিন তাতে ছন্দপতন হয়। কথিত রয়েছে মৃৎশিল্পী সেভাবেই প্রতিমা গড়েছিলেন। কিন্তু সকালে উঠে দেখেন কার্তিক ও গণেশে স্থান পাল্টাপাল্টি হয়ে গিয়েছে। ফের ঠিক করেন মৃৎশিল্পী। কিন্তু তারপরের দিন নাকি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসেন কার্তিক ও গণেশের অবস্থান। তা দেখে আর বদল করা হয়নি প্রতিমায়। দেবী দুর্গার বাঁ দিকে গণেশ এবং ডান দিকে কার্তিককে রেখেই পুজো করা হয় দেবীকে। যে পুজোর কথা বলা হচ্ছে, তা বালুরঘাটের সাহা বাড়ির পুজো। পরিবারের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাঁদের পুজোর বয়স ১৮২ বছর। কার্তিক-গণেশের স্থান পাল্টালেও লক্ষ্মী ও সরস্বতীর অবস্থান আগের মতোই রয়েছে।


প্রায় ২০০ বছরের পথচলা:
দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur) বালুরঘাট (Balurghat)। বহু প্রাচীন কাল থেকেই সম্ভ্রান্ত এলাকা হিসেবেই পরিচিত। সেখানেই তিন নম্বর মোড় এলাকায় রয়েছে সাহাবাড়ি। ওই সাহা পরিবারের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ বনমালী সাহা এখানে এই বাড়ি তৈরি করেছিলেন। সেটাও ছিল প্রায় ২০০ বছর আগে। আদতে সাহা পরিবার ছিল পূর্ববঙ্গ অধুনা বাংলাদেশের বাসিন্দা। সেখান থেকে বনমালী সাহা ব্যবসার জন্য বালুরঘাটের বিশ্বাসপাড়ায় এসেছিলেন। জলপথে এসেছিলেন তিনি। এখানে বাড়িও তৈরি করেন। তারপর শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো (Durga Puja)। প্রথমে প্রচলিত প্রতিমাতেই পুজো হতো এই বাড়ির। পরে ওই ঘটনার পর থেকে পরিবর্তিত হয় প্রতিমার ধাঁচ। 


সাহা বাড়ির পুজো:
এখন গোটা বালুরঘাটে ওই বাড়ির পুজো সাহা বাড়ির পুজো বলেই পরিচিত। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, পুজোর সঙ্গে, আয়োদনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরা নাকি বংশপরম্পরায় এই বাড়ির পুজো করে আসছেন। মৃৎশিল্পী থেকে পুরোহিত সকলেই বংশপরম্পরায় এই বাড়ির পুজোর সঙ্গে যুক্ত। এই বাড়ির বর্তমান সদস্য কালীকৃষ্ণ সাহা জানান, 'বনমালী সাহা প্রথমে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। প্রথমদিকে প্রচলিত অবস্থানে থাকত প্রতিমা। কিন্তু কয়েক বছর পরেই পরিবর্তন করা হয় এক অলৌকিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। শোনা যায় মৃৎশিল্পী দুর্গার বাঁ দিকে কার্তিক এবং ডান দিকে গণেশ বানিয়ে ছিলেন নিয়ম অনুসারে। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা যায় দুর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর অবস্থান ঠিক থাকলেও কার্তিক ও গনেশের অবস্থান পাল্টে গিয়েছে। মৃৎশিল্পী আবার মায়ের বাঁ দিকে কার্তিক ও ডান দিকে গণেশের অবস্থান করে দেন। কিন্তু পরদিন সকালে ফের পাল্টে যায় কার্তিক ও গনেশের স্থান। এরপর বনমালী সাহার মত নিয়ে ওই অবস্থানে মায়ের পুজো শুরু হয়। সেই থেকে একই নিয়ম-নিষ্ঠা সহকারে সাহা বাড়ির দুর্গা পুজো হয়ে আসছে।'


একই কাঠামোয় পুজো:
নিয়ম-প্রথা যে এক রয়েছে তাই নয়। আরও একটি চমক রয়েছে। পরিবারের বর্তমান সদস্য কালীকৃষ্ণ সাহা জানাচ্ছেন,  একই কাঠামোতে প্রতিমা তৈরি হয়ে আসছে। অর্থাৎ কাঠামোটির বয়সও ১৮২ বছর হতে চলেছে ৷ এছাড়াও, সাহা বাড়ির পুজোয় দেবীর ভোগেও থাকে বিশেষত্ব। ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় দুধের তৈরি নানা উপকরণ।


আরও পড়ুন:  জাঁক কমলেও ঐতিহ্য অম্লান, জমিদারের পুকুরের মাছেই ভোগ পান দেবী