সন্দীপ সরকার, কলকাতা: রাজ্য জুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গি থ্রি-র প্রকোপ (Dengue 3)। উদ্বেগের তথ্য উঠে এল নাইসেডের (National Institute of Cholera and Enteric Diseases/NICED) রিপোর্টে। চলতি মাসে, এখনও পর্যন্ত ৫০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫টিতেই মিলেছে ডেঙ্গি থ্রি-এর ভাইরাস। এমনটাই উঠে এসেছে নাইসেডের রিপোর্টে। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।


রাজ্যে বাড়ছে ডেঙ্গি থ্রি-র প্রকোপ


বাংলায় এই মুহূর্তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিপজ্জনক ‘ডেঙ্গি 3’ বা ‘ডেঙ্গ 3’। ডেঙ্গি টু-র পাশাপাশি বিপদ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি থ্রি-এর ভ্যারিয়েন্টও। নাইসেডের রিপোর্টে উঠে এল চরম উদ্বেগজনক এই তথ্য। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাব থেকে ডেঙ্গি আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় নাইসেডে।


স্বাস্থ্যভবনের (West bengal Health Department) পাঠানো সেই সব নমুনা পরীক্ষা করে নাইসেড জানিয়েছে, গত অগাস্ট মাসে আসা ৫০টি নমুনার মধ্যে ২০টি নমুনায় ডেঙ্গি থ্রি-এর ভ্যারিয়েন্ট মিলেছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি অবধি ৫০টি নমুনার মধ্যে ৩৫টিতেই মিলেছে ডেঙ্গি থ্রি-এর ভাইরাস। অর্থাৎ ডেঙ্গি থ্রি ক্রমশ ছড়াচ্ছে বাংলায়।


এ নিয়ে নাইসেড অধিকর্তা শান্তা দত্ত বলেন, "ডেঙ্গি থ্রিই বেশি, ৩৫টি ডেঙ্গি থ্রি, ১০টি ডেঙ্গি ২, এক দু’টো ডেঙ্গি ওয়ান, ২০১৯-এ ডেঙ্গি ২ বেশি হয়েছিল, এবার ডেঙ্গি থ্রি ম্যাক্সিমাম।"


আরও পড়ুন: Dengue Situation: ডেঙ্গি আক্রান্ত কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল, ভর্তি হাসপাতালে, ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ভয় ধরাচ্ছে শহরবাসীর মনে


ইতিমধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। ২০১৯ সালে প্রকোপ ছড়িয়েছিল ডেঙ্গ 2। তার সঙ্গে এবারে মাথা ব্যথা বাড়িয়েছে ডেঙ্গ 3। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে এখনও অবধি ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। সামনে এসেছে ১৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর খবর। তবে স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, সেগুলি ডেঙ্গিতেই মৃত্যু কি না জানতে চলছে ডেথ অডিট।


এরই মধ্যে সোমবার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে কলকাতা পুরসভা। সেখানেও ‘ডেঙ্গি থ্রি’ ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে গেল নাইসেডের রিপোর্টে। 


প্রশাসনকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ মমতার


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে যদি কেউ ডেঙ্গি টু দাপট দেখিয়েছিল। ডেঙ্গি টু তে কেউ আক্রান্ত হলে, শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা এই ডেঙ্গি থ্রিয়ের মোকাবিলা করতে পারবে না। মাইক্রোবায়োলজিস্ট দেবকিশোর গুপ্তর কথায়, "এটা ৭০ শতাংশ স্যাম্পলে ডেঙ্গি থ্রি পাওয়া গেছে, এটা অ্যালার্মিং, প্লেটলেট কমে না, কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, এটাই ডেঙ্গি থ্রিয়ের চরিত্র।"


এতদিন শ্রীলঙ্কা, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার কিছু দেশে ডেঙ্গি থ্রি-র ভ্যারিয়েন্ট প্রভাব দেখা যেত বেশি। এই বছর সিঙ্গাপুরেও ডেঙ্গি থ্রি-এর প্রকোপ দেখা গিয়েছে।  সেই বিপজ্জনক ডেঙ্গি থ্রি-এ আক্রান্তের সংখ্যা এখন বাড়ছে বাংলাতেও।


বুধবার নিমতৌড়ির প্রশাসনিক বৈঠকে তা নিয়ে কড়া নির্দেশই দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, "ডেঙ্গিটা বেড়েছে কয়েক জায়গায়। দেখে নিতে হবে। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার জন্য যে অ্যাডটা আছে, সেটা চালিয়ে যাও।" ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলিকে সংশোধিত নির্দেশিকা পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।