রঞ্জিত সাউ, কলকাতা: দোরগড়ায় পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election)। এদিকে রাজ্যের জেলায় জেলায় জনসংযোগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের নিশানায় গেরুয়া শিবির। যদিও চুপ বসে নেই বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নের্তৃত্বরাও। আর এদিন ঝাল মেটালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। বক্তব্যে এল শাহ-সফর, তৃণমূলের নবজোয়ার, গরুপাচার মামলার ইস্যু থেকে অমর্ত্য সেন।


অভিষেকের ভোটের টার্গেটকে নিশানা


সাগরদিঘির মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২৪ লোকসভা ভোটের ৪০ টি আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন। এবার সেই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন,' টার্গেট ওনারা দেন, পৌঁছান কত দূর ? এখন ৪০ টি MP সিট জিতছেন গত নির্বাচনে ৪২ এ ৪২ টাই বলেছিলেন। আমরা যেহেতু ২২ বলেছিলাম, ১৮৫ পৌঁছলাম। ওনারা ৪২ বলে ৩৪ থেকে ২২ এ নেমেছিলেন। সেই জন্য এটা অনুকরণ করে কিছু করা যাবে না। আমরা খেলি ফুটবল ।ফুটবল খেলতে গিয়ে জুতোই চলে যাচ্ছে বলের সঙ্গে। অনুকরণ করলে এরকম হবে। অরিজিনাল কিছু করুন। এটা দিয়ে আর বেশি দিন চলবে না। আপনারা ৩৫ বলার পর তৃণমূল লোকসভায় আসনের সংখ্যা সেটাকে বাড়িয়ে ৪০ করেছে। গতবারে ৪২ বলেছিলেন। ২ টো কম করেছেন কেন ? বুঝতে পারছেন ওনারা সর্বভারতীয় পার্টি থেকে লোকাল পার্টি হয়ে গেছে। টার্গেট তো ছোট হয়েছে।


  শাহ-সফর নিয়ে কী বললেন দিলীপ ?


তিনি আরও বলেন, অমিত শাহ রাজ্যে আসছেন। ওনার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলি ওনার সফরসূচি থেকে বাদ পড়েছে। তৃণমূলের তরফে দাবি, মণিপুর জ্বলছে, ওনার কিছু বলার নেই। ওনার রাজনৈতিক সফরসূচি নেই। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। বিএসএফের বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন, যেহেতু পশ্চিমবাংলায় রবীন্দ্রজয়ন্তী আছে, কিছু সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। রাজনৈতিক ট্যুরে আসছেন না।


'অমর্ত্য সেনকে অপমান'


অমর্ত্য সেনকে অপমান করে যারা,  তাদের রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের এক্তিয়ার নিয়ে কুণাল ঘোষের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,' যে রবীন্দ্রনাথের জায়গা দখল করে নেয়, সে রবীন্দ্রপ্রেমী হয় নাকি !  পাশাপাশি দিলীপের কথায় এদিন উঠে এল ডিএ ইস্যুও। মূলত DA আন্দোলনকারীরা জেলায় জেলায় ডিএম অফিসে অবস্থান করবেন, লাগাতার কর্ম বিরতির কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন। এই ইস্যুতে দিলীপ ঘোষ বলেন, ঠিকই আছে তাঁরা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাকার জন্য ধর্ণা দিতে পারেন। তো ডিএ-র জন্য কর্মচারীরা দিতে পারেন না ? তাঁরা চাকরি করছেন, কাজ করছেন, তাঁরা তাদের বেতন চাইছেন।


'বিজেপি থেকে কে গেছে ?'


 বেলেঘাটারকাণ্ডে রাজু নস্করকে পুলিশের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'এতদিন করা হয়নি কারও স্বার্থে, কে তাকে প্রোটেকশন দিচ্ছিল ? রাজু নস্করের মতো এরকম পাড়ায় পাড়ায় মস্তান হয়েছে, যারা এক এক স্কোয়ার ফুট বিল্ডিংয়ের জন্য টাকা তোলে ।বেলেঘাটা অঞ্চলের সন্ত্রাস কে করে রেখেছে। চিরদিন বোম বন্ধুক নিজেদের মধ্যে, অন্য কোনও পার্টি নেই। সে নাকি বলছে বিজেপির থেকে আসা লোকেরা ওর বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিজেপি থেকে কে গেছে ? ওই পার্টিতে কেন যাবে ওখানে ? অনেক লোক এসেছিল আমাদের পার্টিতে ও নিজেও আসার চেষ্টা করেছিল। গত ভোটের আগে ওখানে যারা যারা নেতা আছে, সব যোগাযোগ করেছিল। আমরা নিইনি তাদেরকে। কী জিনিস আমরা জানি, এবার লোকে জানতে পারছে।


'ভোট যদি লুট করতে আসে, তাঁকে রসগোল্লা খাইয়ে ছেড়ে দেব না'


অপরদিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুঠ হলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার মন্তব্যে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই, সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, 'বিতর্কর কি আছে ? ভোট লুট করতে এলে, পুলিশ কিছু করবে না, আমরাই যা করার করব।আমরা দেখেছি গত বারে পুলিশে ভোট লুঠ করিয়েছে। আমরা লড়াই করেছি। সংগঠন করেছি। লোককে পরিষেবা দেব। নির্বাচনে লড়ছি। ভোট যদি লুট করতে আসে, তাঁকে রসগোল্লা খাইয়ে ছেড়ে দেব না।'


তৃণমূলের নবোজোয়ার কর্মসূচি: 'এমন জোয়ার আসছে, ব্যালট বাক্স ভেসে চলে যাচ্ছে', বলেন দিলীপ


সম্প্রতি তৃণমূলের নবোজোয়ার কর্মসূচিতে বহরমপুরে ব্যালটবাক্স লুঠ ও বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিশৃঙ্খলা তো হবেই সব জায়গায়, পার্টিতে যদি সমাজ বিরোধীদের নিয়ে নেন, বিশৃঙ্খলা হবেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েও সামলাতে পারেনি। পার্টিটা কারও কন্ট্রোলে নেই।'জনজোয়ারে কি ফ্লপ কর্মসূচিতে রূপান্তরিত হচ্ছে ? প্রশ্নের উত্তরে এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, 'এটাই হচ্ছে এমন জোয়ার আসছে ব্যালট বাক্স ভেসে চলে যাচ্ছে। এই জোয়ারটা হয়তো আমাদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখতে হবে। তার প্র্যাকটিস ম্যাচ হচ্ছে‌। আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ এত সহজে ছেড়ে দেবে না ।পার্টির মধ্যে ঝগড়া পার্টির মধ্যে রাখুন সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করবেন না।'


'দাদার পুলিশের সবাই ভরসা করে, দিদির পুলিশে দিদিরও ভরসা নেই'


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,'অধীর চৌধুরী দিদির পুলিশে ভরসা করেন না। দাদার পুলিশে ভরসা করেন, ওনার দাদার নাম অমিত শাহ।' এই ইস্যুতে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'শুনুন দাদার পুলিশের সবাই ভরসা করে। দিদির পুলিশে দিদিরও ভরসা নেই। পুলিশকে যেভাবে কথা বলেন, অপমান করেন ,চাবকানোর কথা বলেন, অকর্মা বলেন উনি বলেন। বাকিরা কেন ভরসা করবে আর সেন্ট্রাল ফোর্সের উপর সারাদেশের লোক ভরসা করে। আপনারা দেখলেন রামনবমীর মিছিল হল, ইট পাথর চলল। পুলিশ সামলাতে পারল না। যেই সেন্ট্রাল ফোর্স নামল, হনুমান জয়ন্তীতে সব ঠান্ডা হয়ে গেল। কার কী আছে, কার উপর ভরসা করা যায়।'


আরও পড়ুন, জানেন কি রান্নাঘরের এই মশলা জীবন বদলে দিতে পারে ?


আরও পড়ুন, গরমে কোন সরবতগুলি না খেলেই নয় ? কোনগুলি খুবই স্বাস্থ্যকর ? 


'অবৈধভাবে গরু ঢুকবে, রাজ্য সরকার কি তাহলে শুধু ঘুমাবে?'


'ইডি তার চার্জশিটে জানিয়েছে বিএসএফ জড়িত আছে..' এই প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, 'তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরা যদি গরু পাচারের সঙ্গে  যুক্ত হয় পুলিশ সহযোগিতা করে। বিএসএফের মধ্যে থাকতে পারে একটা দুটো খারাপ লোক, কোথায় নেই ? ব্যাপারটা তো এই রাজ্য সরকারের। অবৈধভাবে গরু ঢুকবে, ড্রাগস ঢুকবে ওপার বাংলা থেকে। সোনা আসবে, কোকেন আসবে। এই রাজ্য সরকার কি তাহলে শুধু ঘুমাবে? কাটমানি নেবে? ভাগ নেবে ? আর বাকিরা লড়াই করবে। লোকে জিতিয়েছে কেন ওনাদেরকে ?' প্রশ্ন তোলেন দিলীপ।