জয়দীপ হালদার, দক্ষিণ ২৪ পরগণা : 'সব তীর্থ বার বার গঙ্গা সাগর একবার', লোকমুখে এই কথার প্রচলন । করোনা আবহে এই গঙ্গাসাগরে লোক সমাগম আদৌ করা উচিত কিনা, এই নিয়ে তর্ক চলছেই। মামলাও চলছে হাইকোর্টে। কিন্তু ভক্তকূলের একাংশ মনে করছেন, কুছ পরোয়া নেহি। সব ভয়কে জয় করে অকুতোভয়ের মতো এগিয়ে চলেছেন তাঁরা উৎসব পালন করতে। পুণ্যস্নান সারতে। এবার বাবা মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে স্ত্রীকে নিয়ে রিক্সা করে গঙ্গাসাগর অভিযানে পাড়ি দিলেন ছেলে।
সম্বল একটি প্যাডেল রিক্সা। পরিপাটি করে সাজানো সেই ত্রিচক্র যানটি ! দু’জন মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও রীতিমতো আছে ওই রিক্সায়। রিক্সার চালক মধ্য পঞ্চাশের মহাদেব ঠাকুর। আর যাত্রীর আসনে মহাদেবের স্ত্রী মধ্য চল্লিশের গাঙ্গিয়াদেবী।
আরও পড়ুন :
দুটি টিকা নেওয়ার সার্টিফিকেট না থাকলে সাগর দ্বীপে প্রবেশ নয়, জানিয়ে দিল হাইকোর্ট
ঝাড়খন্ডের গিরিডির বাসিন্দা এই দম্পতি। মহাদেব পেশায় পণ্যবাহী গাড়ির চালক । বাবা-মাকে দেওয়া কথা পূরণ করতে বদ্ধপরিকর ছেলে। মহাদেব গত ৫ অক্টোবর বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। গন্তব্য সাগরমেলা। করোনার এই ভয়ঙ্কর সময়েও তাঁকে কেউ থামাতে পারেনি। মেলায় পৌঁছতে লাগবে এখনও কয়েক দিন। ওই রিক্সায় চড়েই তাঁরা পৌঁছে যাবেন পুণ্য করতে। বদ্ধপরিকর মহাদেব।
ডায়মন্ড হারবার থেকে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে মহাদেবের রিক্সা। উদ্দেশ্য, পুণ্য তিথিতে সাগরে স্নান করে কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দিয়ে বাবা ও মাকে দেওয়া কথা রাখা । তবে শুধু গঙ্গাসাগর নয় মহাদেবের এই রিক্সা ঘুরবে আরও পাঁচ ধামে। কিন্তু কেন এই রিক্সা-যাত্রা।?
চালক নিজেই জানালেন, প্রায় ১৪ বছর কয়েক আগে রিক্সাতে চড়িয়ে বাবা-মাকে নিয়ে পাঁচ ধাম ঘুরেছিলেন মহাদেব। তখন বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল তাঁদের মৃত্যুর পর মহাদেব যেন আবারও রিক্সাতে সওয়ার হয়ে তীর্থযাত্রা করে। সঙ্গী থাকবে স্ত্রী। মহাদেবের কথায় বাবা মাকে দেওয়া সেই কথামতো এই যাত্রা। শুধু গঙ্গাসাগর নয়, এরপর তাঁদের গন্তব্যে হতে পারে পুরী, হরিদ্বার । আপাতত মহাদেবের যান এখন সাগরমুখী।
বেলাগাম সংক্রমণের মধ্যেই চলছে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি! পাশাপাশি, আগের সিদ্ধান্ত বদলে ঠিক হয়েছে, এবার বীরভূমের জয়দেবের কেঁদুলির মেলাও করা হবে! আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা।