সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা : খুব কষ্ট করে একসময় বড় করেছিলেন সন্তানদের। কিন্তু আজ তাঁদের সংসারে জায়গা নেই মায়ের। ছেলেমেয়েরা কেউ খেতে দেয় না। পেটের জ্বালা মেটাতে তাই একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন ৯০ এর বৃদ্ধা।  হাঁটতে গেলে  লাঠি লাগে। খিদের জ্বালায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেন না। তাও খাবার জোটে না ছেলে-মেয়েদের সংসারে। তাই বাইরে বেরিয়ে পড়েছিলেন খাবারের সন্ধানে। কিন্তু শেষমেষ বাড়ি ফিরতে চেয়ে দেখলেন রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। 


রাতের তের অন্ধকারে সোজা গিয়ে হাজির হলেন তিনি বনগাঁ থানায়। পুলিশ কর্মীদের কাছে হাত জোড় করে বললেন, 'বাবা একটু বাড়ি পৌঁছে দাও। অন্ধকারে বুঝতে পারছি না। ' বৃদ্ধার কষ্ট দেখে উদ্যোগী হন বনগাঁ থানার এসআই কৃষাণু বিশ্বাস। বৃদ্ধাকে নিয়ে থানার বড়বাবুর কাছে নিয়ে যান। তিনি অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর বাড়ির ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই বৃদ্ধা ঠিকঠাক কিছুই বলতে পারছিলেন না।


বনগাঁ থানার বড়বাবু ও এসআই কিষাণু  রাতে থানাতেই বৃদ্ধার খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।  এরই মধ্যে বিভিন্ন থানায় বৃদ্ধার ছবি ও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু খোঁজ মেলেনি তাঁর বাড়ির ঠিকানার। এরপর বনগাঁ থানা থেকে হ্যাম রেডিওর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের কাছে খবর দেওয়া হয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিওর ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস ওই বৃদ্ধার ছবি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। এরপর তাঁদের প্রচেষ্টাতেই ওই বৃদ্ধার বাড়ির ঠিকানা পাওয়া যায়।


নগরউখড়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশবেড়িয়া গ্রামের চাপরাকান্দায়  বাড়ি তাঁর। বৃদ্ধার  নাম দুলে মণ্ডল । স্বামী, মেঘনাথ মণ্ডল। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মিজাবুর রহমান হ্যাম রেডিওকে জানান, বৃদ্ধার নাতি তরঙ্গআটি হাইস্কুলে পড়ে। নাতিকে এই স্কুলে ভর্তি করার পাশাপাশি রোজ স্কুলে পৌঁছে দিতেন ওই বৃদ্ধাই।


বৃদ্ধার প্রতিবেশী পরিমল মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি তাঁর নাতি নাতিদের খুব ভালবাসেন। কিন্তু তাঁকে দুবেলা দুমুঠো খেতে দিত না ছেলে ও বউমারা। তাই খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন। শেষমেশ বনগাঁ থানায় গিয়ে তিনি আশ্রয় নেন।


এভাবে বৃদ্ধাকে ঘর খুঁজে দিতে পেরে খুশ হ্যাম রেডিও-র পশ্চিমবঙ্গের শাখা। হ্যাম রেডিওর প্রচেষ্টায় ওই বৃদ্ধাকে তার বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে বনগাঁ থানার ওই মানবিক পুলিশ অফিসার কৃষাণু বিশ্বাস। 


আরও পড়ুন :


এবার কি সত্যিই প্রত্যাবর্তন শোভনের? আর মেয়র থাকবেন না ফিরহাদ? বড় বার্তা দুই তরফেই