সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: অপমানের অভিযোগে সরকারি অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গেলেন তৃণমূলেরই বিধায়ক! হুগলির বলাগড়ের এই ঘটনায় নাম না করে দলেরই প্রাক্তন বিধায়ককে নিশানা করলেন বর্তমান বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। যা নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে বিজেপি।  


সরকারি অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন খোদ তৃণমূল বিধায়ক, তার কয়েক মুহূর্তে পরেই উগরে দিলেন ক্ষোভ। বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন, 'আমাকে কেউ সম্মান না করুক, তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ অপমান করবে, আমি সেই অপমানটা জেনেবুঝে সহ্য করব, তত বোকা, তত মূর্খ তো আমি নই।'


পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনায় ফের একবার উস্কে গিয়েছে শাসকদলের অন্দরের দ্বন্দ্বের জল্পনা। হুগলির বলাগড়ের জিরাটের ভূমিপুত্র পঞ্চানন কর্মকার। মুদ্রণশিল্পে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। সম্প্রতি বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে তৈরি একটি সংগ্রহশালা পঞ্চানন কর্মকারের নামে করা হয়। মঙ্গলবার যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে উপস্থিত থাকলেও, আচমকা অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে যান বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক। 


কিন্তু কেন এমন ঘটনা?  
মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন, 'যারা এই কর্মকাণ্ডের ধারের কাছে নেই, তাদের নাম ওপরে বড় বড় করে আর নীচে অতিকষ্টে বিধায়ক বলে লিখে দেওয়া হল। এটা কি জেনে বুঝে হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে, আমাকে অপমান করার জন্য হয়েছে। তারজন্য আমি ওই অনুষ্ঠান বয়কট করে বেরিয়ে চলে এসেছি।'


উদ্বোধনী ফলকে দেখা যাচ্ছে, উদ্বোধক হিসেবে সবার ওপরে নাম রয়েছে সাহিত্যিক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের। তারপরই নাম রয়েছে, এসসি এসটি ওবিসি উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান অসীমকুমার মাঝির। যিনি আবার বলাগড়েরই প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক! আর প্রাক্তন বিধায়কের নামের নীচে মহকুমাশাসকের। আর মহকুমাশাসকের পর বর্তমান বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর নাম রয়েছে। তাহলে কি প্রাক্তন বিধায়কের নাম ওপরে থাকাতেই অসন্তুষ্ট বর্তমান বিধায়ক? বলাগড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অসীমকুমার মাঝি বলেন, 'কারও যদি কোন কাজ থাকে বেরিয়ে যেতেই পারে। আমি এসেছিলাম অনেক দেরি করে। নামের বিষয়ে তার হয়তো জানা নেই, আমাদের এই পদটা ক্যাবিনেটের র‍্যাঙ্কের।' মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন, 'আমিও তো কমিটির চেয়ারম্যান। আমাকে সারা দেশের লোক চেনে।'


এই ঘটনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। পাল্টা উত্তর দিয়েছে তৃণমূলও। হুগলি বিজেপি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউয়ের দাবি, এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। হুগলি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল নেতা অরিন্দম গুঁই বলেন, 'উনার হয়তো মনে হয়েছে উনি কোন ভাবে অসম্মানিত হয়েছেন । সে বিষয়টি আমরা দেখে নেব । সরকারি অনুষ্ঠানে যদি কোথাও ভুল ভ্রান্তি থাকে সেটা দেখে নেওয়ার দরকার আছে।' যদিও নিজের বক্তব্যে অনড় বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক।


আরও পড়ুন: শুভেন্দুর অনুষ্ঠানে কম্বল নিতে হুড়োহুড়ি! পদপিষ্ট হয়ে মৃত একাধিক