অর্ণব মুখোপাধ্যায়, হুগলি: ওলন্দাজদের (Dutch) হাত ধরে তৈরি হয়েছিল চুঁচুড়া (Chinsurah) শহরের নিকাশি ব্যবস্থা (drainage system)। কিন্তু, সংস্কারের অভাবে, এখন ধসে যাচ্ছে সেই সিস্টেম। এর জেরেই এলাকার বেশকিছু বাড়িতে ফাটল ধরছে বলে দাবি। এই পরিস্থিতিতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন স্থানীয় পুর চেয়ারম্যান।


চুঁচুড়ায় নিকাশি ‘উদ্বেগ’


হুগলি মানেই উপনিবেশের একটা লম্বা কাহিনি। চন্দননগরে ফরাসি, শ্রীরামপুরে পর্তুগিজ, চুঁচুড়ায় গড়ে উঠেছিল ওলন্দাজদের উপনিবেশ। কালে কালে গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। এখন সেসব শুধুই ইতিহাস। তবে উপনিবেশের সেইসব শৈলী এখনও বুকে ধারণ করে আছে ঐতিহাসিক শহরগুলো। 


যেমন, চুঁচুড়ার গঙ্গাপাড়ে বসতি স্থাপন করেছিল ওলন্দাজরা। ধীরে ধীরে গোটা একটা শহর পত্তন হয়। এই গুস্তাভের ওপর গড়ে ওঠে ইংরেজদের ব্যারাক। এখানে এখন জেলাশাসকের দফতর। চুঁচুড়ার ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা ওলন্দাজদের হাত ধরেই তৈরি। যা কিনা কলকাতায় ব্রিটিশদের তৈরি নিকাশির থেকেও পুরনো। এখনও গঙ্গার ধারে হাঁ মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে, এই ড্রেন। গঙ্গার পাড়ে রয়েছে কাঠের দণ্ড। যা দিয়ে ওলন্দাজরা গঙ্গার জল মাপতো।


কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে, সংস্কারের অভাবে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। ফাটল দেখা দিচ্ছে ঘরবাড়িতে। চুঁচুড়ার বড়বাজারের দত্ত লজ। ডাচ নিকাশির ওপর এই বাড়ি। বাড়িতে ফাটল। রান্না ঘরে ফাটল। ঠাকুরঘরে ফাটল।


ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকের কথায়, 'একদিন দেখছি, থান ইঁট, নুড়ি ভেসে যাচ্ছে। ছেলে বলছে অন্যকিছু। পরে দেখা যায় রান্নাঘরের তলা ধসে গেছে।'


ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দার কথায়, 'পাঁচিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছি। ডাচ নিকাশির ওপর দাঁড়িয়ে এই বাড়ি।'


সমস্যার সমাধানে, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন চুঁচুড়ার পুর প্রধান। চুঁচুড়া পুরসভার পুর প্রধান অমিত রায়ের কথায়, 'আমার কাছে তো কোনও ম্যাপ নেই। আমরা ম্যাপ তৈরির জন্য বলেছি। কেএমডিএ এসেছিল। দেখে গেছে। টানেল সোয়ারেজ যদি করা যায়।'


আরও পড়ুন: North 24 Paragana: কাটল জমিজট, দেড় বছরেই বাদুড়িয়ায় ইছামতীর উপর সেতু


এই নিকাশি পরিষ্কার কী করে হয়? অমিত রায় বলেছেন, 'ব্যাক ওয়াটার হয়ে যায়। এটা একটা সমস্যা। লাইনার যদি কিছু করা যায় সেকথাও পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রকে বলেছি।' পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমর কথায়, 'হ্যাঁ। ভাবনাচিন্তা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সাহায্য নেব। পুরসভাকে বলেছি, টেন্ডার করুন।' দ্রুত সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায় চুঁচুড়াবাসী।