সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি:  বাড়ি ফিরলেন পিয়ালি বসাক। মাকালু জয় করে ফেরার পথে মাইনাস পঞ্চাশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রায় ২২ ঘন্টা তুষারঝড়ে আটকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে, আজই চন্দননগরের বাড়িতে ফিরলেন পাহাড়ি কন্যা পিয়ালি বসাক (Piayali Basak)।

  


 ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা পিয়ালি বসাক


এদিন পিয়ালি বসাক বলেন, শেরপারাতো বুঝতে পারছিল না, ফাঁটলের মধ্যে কোনদিকে যেতে হবে ? কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না আমরা। আর অত বড় বিশাল পাহাড়ে, বোঝা যায় না...। এইবারে আমরা চারজনে দড়ি বেঁধে নিয়ে নামছিলাম। কারণ কেউ যদি ফাঁটলে পড়ে যায়, তাঁকে যাতে তোলার সুযোগ পাওয়া যায়। .. এইভাবে নামতে নামতে, আন্দাজেই নামছি। তখন আমরা দড়িটা খুঁজে পেয়েছিলাম। ..এমন সময়ে তখন আমরা দেখি যে অন্য দেশের বাসিন্দা এক পর্বত আরোহী, তারও মর মর অবস্থা। তাঁকে তুলতে তুলতে আমাদের ৫ ঘণ্টা ওইখানটায় কেটে যায়।...আর এই পরিস্থিতিতে আমিও চোখে প্রায় দেখতে পাচ্ছিলাম না।..এদিকে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় শেরোপারাও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এরপর উদ্ধার করতে হবে, সেই জন্য ওরা চলে যায়। এদিকে আমি ওখানে একা থেকে যাই। রাতেই তুষারঝড় ওঠে। ...এরপর পায়ের আঙুলের ডগার উপর ভর দিয়ে আমি ২২ ঘণ্টা ওখানে ছিলাম।'



বেস ক্যাম্পে নামানো হয় পিয়ালিকে


১৭ মে সামিট করে ফেরার পথে তুষার ঝড়ের মধ্যে পড়েন পিয়ালি। ৭৫ ডিগ্রি ঢালের মধ্যে জুতোয় লাগানো ক্রাম্পনের ওপর ভর করে প্রায় ২২ ঘন্টা থাকার পরে এক রাশিয়ান পর্বতারোহি ও তাঁর শেরপা পিয়ালিকে দেখতে পায়। তাঁরা স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ করেন কাঠমান্ডুতে। তারপর শেরপারা এসে কোনওভাবে পিয়ালিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে ক্যাম্প থ্রিতে। তাঁর আগেই তুষার ঝড়ে স্নো ব্লাইন্ডনেস হবার কারণে চোখে দেখতে পাচ্ছিলেন না। সেই অবস্থায় কোনওভাবে ধরে ধরে ক্যাম্প থ্রি-তে নামানো হয়। সেখান থেকে বেস ক্যাম্পে নামানো হয় পিয়ালিকে।


হাসপাতালে বেশ কদিন ভর্তি ছিলেন


 বেসক্যাম্প থেকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হয় নেপালে লুকলাতে। সেখানে হাসপাতালে বেশ কদিন ভর্তি ছিলেন। দুপায়ের চারটে আঙুল ফ্রস্ট বাইটের কারণে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেরে উঠতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। তাতেও দমানো যাচ্ছে না পিয়ালিকে। একটু সুস্থ হয়েই আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা, চো ইউ, সিসা পাংমা সহ আরও আট হাজারের বেশি পিকগুলোর লক্ষ্যে পাড়ি দেবেন পিয়ালি। অপরদিকে, এদিন বাড়ি ফিরতেই প্রতিবেশিরা উপস্থিত হয় পিয়ালির বাড়িতে।তারা ফুলের মালা পড়িয়ে অভ্যর্থনা জানায় পিয়ালিকে। এর আগে অন্নপূর্ণা জয় করে মাকালু অভিযান না করেই ফিরে এসেছিল বাবার অসুস্থতার কারণে। আজ তাই বাড়ি ফিরে আগেই বাবার কাছে ছুটে যান পিয়ালি। 


মাকালু শৃঙ্গ জয় পিয়ালি বসাকের


সম্প্রতি মাকালু শৃঙ্গ জয় করেন পিয়ালি বসাক (Piayali Basak)। নেপালের এজেন্সি পাইওনিয়ার অ্যাডভেঞ্চার জানিয়েছিল,  সকাল সাতটা থেকে আটটা নাগাদ, মাউন্ট মাকালু যা বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ, সেটি জয় করেন পিয়ালি বসাক। এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ের পর আরও দুটি হাট হাজারি শৃঙ্গ জয় করলেন চন্দনগরের পাহাড় কন্যা। উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ অন্নপূর্ণা ও মাকালু পর্বত শৃঙ্গ জয় করার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পর্বত আরোহী পিয়ালি।


আরও পড়ুন, সাঁতারে কী কী রোগ থেকে মুক্তি ? কী বলছেন চিকিৎসক ?


আরও পড়ুন, জানেন কি রান্নাঘরের এই মশলা জীবন বদলে দিতে পারে ?


১৭ এপ্রিল সোমবার সকালে পৃথিবীর দশম উচ্চতম (৮০৯১ মিটার) অন্নপূর্ণা পর্বত শৃঙ্গ জয় করেন। ২০১৮ সালে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসুলু জয় করেছিলেন পিয়ালি। তারপর ২০২১ সালে সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ ধৌলাগিরি জয়। ২০২২ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর এভারেস্টে ওঠেন পিয়ালি। তার দুদিন পরেই পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম শৃঙ্গ লোৎসে জয় করেন তিনি।