সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়: সামান্য বিষয় নিয়ে ঝামেলার জেরে মদ্যপ আত্মীয়কে (Drunk man's murder) মাথায় বাঁশ দিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে হুগলি (Hooghly) জেলার চুঁচুড়া শহরের মোগলটুলি (Mogoltuli) এলাকায়। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় চুঁচড়া থানায় মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। শনিবার চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে (Imambara sadar hospital) ভর্তি থাকা অবস্থায় জখম ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার পরই হাসপাতালের সামনে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মৃতের পরিবারের সদস্য ও পরিচিতরা।


স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, ঘটনাটির (Chinsurah Murder) সূত্রপাত হয় গত ১৮ মার্চ সোমবার। ওইদিন বিকেলে মোগলটুলি এলাকায় সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উপরে পড়ে যান বছর ৪৪-এর অমল খান নামে এক ব্যক্তি। আর তারপরই অকথ্য ভাষায় শুরু করে গালাগালি। যার জেরে  ওই এলাকায় থাকা মাজিদ আনসারি নামে তাঁরই এক আত্মীয়ের সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বচসা। পরে হাতাহাতি থেকে লেগে যায় তুমুল মারামারি। এর মাঝেই রাস্তার ধারে পড়ে থাকা একটি খেঁটো বাঁশ দিয়ে অমলের মাথায় সজোরে আঘাত করার অভিযোগ ওঠে মাজিদ আনসারির বিরুদ্ধে। তার ফলে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার ধারে পড়ে যান অমল। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ পরে থাকার পর স্থানীয়রা বিষয়টি লক্ষ্য করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন।


অন্যদিকে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মোগলটুলি এলাকায়। অমলের পরিচিত ও স্থানীয়দের একাংশ গিয়ে অভিযুক্ত মাজিদ আনসারির বাড়িতে গিয়ে শুক্রবার ভাঙচুর চালায়। এরপর  শনিবার সকালে ইমামবাড়া হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাকালীন মৃত্যু হয় অমল খানের। আর তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিমিষে উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে।


মৃতের পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয় যে শনিবার নয় অমলের মৃত্যু আগেই হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ এখনও পর্যন্ত কেন অভিযুক্তকে ধরতে পারেনি সেই অভিযোগ করে ইমামবাড়া হাসপাতালের সামনে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে মৃতের আত্মীয়-পরিজন এবং মোগলটুলির বাসিন্দারা। খবর পেয়ে চুঁচড়া থানার আইসি রামেশ্বর ওঝা প্রচুর পুলিশকর্মী নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়।


 এপ্রসঙ্গে মৃতের স্ত্রী মৌসুমী বিবি বলেন, “ঘটনার দিন আমাকে ফোন করে ডাকা হয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর মাথায় দশটা সেলাই পরেছে আর তাঁর কোনও জ্ঞান নেই। কী যে হল ওকে বাঁচাতে পারলাম না। নেশা করত বলে আমার সঙ্গে অশান্তি হত। আমি বলেছিলাম শুধরে যাও। গত পাঁচ মাস আমি স্বামীর ঘরে ছিলাম না। মা-বোনের সঙ্গে বাপের বাড়িতে থাকতাম। ও বারবার আমাকে বলত বাড়িতে চলে এসো।” 


অমল খানের ভাই শেখ সৌকত বলেন, “আমার দাদাকে পিটিয়ে মেরেছে মাজিদ আনসারি। অভিযুক্তকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। আমরা এই বিষয়ে কিছু বলতে গেলে পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে।”


এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই অভিযুক্তের খোঁজ চালানো হচ্ছে। গতকাল রাতেও বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। তবে অভিযুক্ত মাজিদ ফেরার থাকায় তার নাগাল পাওয়া যায়নি। 


আরও পড়ুন: ওলাবিবি তলায় প্রার্থনা, পোলবায় প্রচারে বেরিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে রান্নায় হাত লাগালেন লকেট