কলকাতা: ‘বার বার মনে হচ্ছে, নিজের হাতে ছেলেকে বিসর্জন দিয়ে এলাম। ঠান্ডা মাথার খুন করেছে সৌরভরাই।’ প্রতিক্রিয়া মৃত যাদবপুরের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার বাবার। সৌরভ-মনোতোষ-দীপশেখরদের কঠোর শাস্তির দাবি।

মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার তিন: যাঁদের ভরসায় ছেলেকে হস্টেলে রেখে এসেছিলেন, তাঁরাই খুনের অভিযোগে গ্রেফতার। যাদবপুর কাণ্ডে (Jadavpur University) ধৃত সৌরভ চৌধুরী, মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত। একজন প্রাক্তনী, আর ২ জন দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। পুলিশ সূত্রে দাবি, মনোতোষের গেস্ট পরিচয়েই হস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘরে ছিলেন মৃত প্রথম বর্ষের ছাত্র। রাতে মনোতোষ ও দীপশেখরই তাঁর ওর চূডান্ত মানসিক নির্যাতন চালাতেন। হস্টেলে ঢোকার দিন আলাপ-পর্ব শুরু হয় রাত ১০টা ১০ থেকে। উপস্থিত থাকতেন মনোতোষ, দীপশেখর ও প্রাক্তনী সৌরভ-সহ আরও কয়েকজন। মনোতোষের ঘরে থাকলেও, বুধবার রাতে অবশ্য অন্য ঘরে চলেছিল পরিচয়-পর্ব।


শোকে বিহ্বল মৃত ছাত্রের বাবা: অকালে ঝরে গিয়েছে তরতাজা প্রাণ। কিন্তু কেন এমনটা হল? ক্লাস শুরুর চার দিনের মাথায় কীভাবে মৃত্যু হল প্রথম বর্ষের ছাত্রের। পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন তাদের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার সময় ছাত্রের ফোন কেড়ে নিয়েছিল সিনিয়ররা। শুধু তাই নয়, তিনতলা থেকে পড়ে যাওয়ার পর, গলা নকল করে অন্য নম্বর থেকে সৌরভ ফোন করেন বলেও অভিযোগ বাবার। মৃত ছাত্রের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু বলেন, “মনোতোষ আর সৌরভ- এই দু'জনকেই আমি চিনতাম।হস্টেল বোর্ডার হিসেবে পরিচয় হয়েছিল। বার বার মনে করছি যে, নিজের হাতে বিসর্জন দিয়ে এলাম। বাবা, আমি আর তোকে বাবা বলে ডাকব না। পুরো গ্যাংটার ইমিডিয়েট অ্যারেস্ট চাই। ইমিডিয়েট।’’ শুক্রবারই বাড়ি আসার কথা ছিল প্রথম বর্ষের ছাত্রের। বদলে বাড়িতে এসেছে নিথর দেহ। ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর মা। শুক্রবারের মতো এদিনও রানাঘাটের বাড়িতে আসে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী দল। রেকর্ড করা হয় বাবার বয়ান।


এদিকে মৃত্যুর তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, মেন হস্টেলে গেস্ট হিসেবে মনোতোষ ঘোষের ঘরে থাকলেও, অন্য একটি ঘরে চলেছিল মৃত ছাত্রের পরিচয়-পর্ব। হস্টেলে ঢোকার দিন সেই আলাপ-পর্ব শুরু হয় রাত ১০টা ১০ থেকে। উপস্থিত ছিল মনোতোষ, দীপশেখরের মতো পড়ুয়ারা ও প্রাক্তনী সৌরভ-সহ আরও কয়েকজন। ধৃত মনোতোষ ও দীপশেখরের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিচয়-পর্বের কোনও ভিডিও তোলা হয়েছিল কি না। ভিডিও বা ছবি থাকলে তা মুছে দেওয়া হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও, ওই দুই পড়ুয়ার ফোন থেকে কোনও টেক্সট মেসেজ করা হয়েছিল কি না, কাদের ফোন করা হয়েছিল, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।  


আরও পড়ুন: Hooghly News: 'বাইরে বেরোলে বুঝতে পারছি আমার পিছু নিচ্ছে,' প্রাণনাশের আশঙ্কা মামলাকারীর