কলকাতা: বলাগড়ের মেধাবী ছাত্রই হোক বা সদ্য যাদবপুরে সুযোগ পাওয়া চাকুলিয়ার পড়ুয়া। যাদবপুরের (Jadavpur University student death) ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে এমন অনেককেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (JU Student Death) ক্যাম্পাসে পা রাখার আগে কাউকে গ্রাস করছে আতঙ্ক, কেউ বা ঘটনার পরই হস্টেল ছেড়ে ছুটে গেছেন বাড়িতে। আশার বদলে এখন আশঙ্কাই সঙ্গী তাঁদের পরিবারের। (Jadavpur University)
ছাত্র মৃত্য়ুতে শঙ্কায় অন্য পড়ুয়ারাও: এদিকে যাদবপুরে ছাত্র মৃত্য়ুর প্রভাব যে কতটা গভীরে পৌঁছে গেছে, তার একের পর এক প্রমাণ সামনে আসছে। হুগলির বলাগড় থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। চলতি সপ্তাহে কাউন্সেলিংয়ের পরই পা রাখার কথা ছিল স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে। সেই সুযোগ অবশেষে এলও। কিন্তু তার আগেই, যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে বলাগড়ের পড়ুয়া ও তার পরিবারকে। যাদবপুরের হস্টেলে এসে থাকার কথা ভাবতেই ভয় হচ্ছে।
বলাগড়ের বাসিন্দা স্বপ্নদীপ মণ্ডল উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন জিরাট হাইস্কুল থেকে। JELET এন্ট্রান্সে ৭৬ র্যাঙ্ক করে সুযোগ এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু, কয়েকদিন আগে যাদবপুরের হস্টেলে যা ঘটেছে, তার পর রীতিমতো ভয়ে সিঁটিয়ে স্বপ্নদীপ। তাঁর কথায়, “সত্যি বলতে কি আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। এমন একটা ঘটনা ঘটল তারপরে কোন সাহসে হস্টেলে গিয়ে থাকব আমার যথেষ্ট ভয় করছিল। আমার স্বপ্ন ছিল যাদবপুরে পড়ার। কিন্তু মনে হচ্ছিল সেই স্বপ্নটা বুঝি আর পূরণ হল না।’’
স্বপ্নদীপের বাবা ফুলের চারা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। ছোটখাটো বিউটি পার্লার চালান তাঁর মা। সংসারের হাঁড়ির হাল। হস্টেল ছাড়া আর কোথায়ই বা রাখবেন ছেলেকে? মেস ভাড়া করে রাখার ক্ষমতা তাঁদের নেই। কিন্তু একমাত্র ছেলেকে এই পরিস্থিতিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতেই ভয় পাচ্ছেন স্বপ্নদীপের মা-বাবা। পড়ুয়ার মা করবী মণ্ডল বলেন, “আমি ভাবতেই পারছি না। এখন ওকে বলেছি রোজ আমাকে অনেকবার করে ফোন করবি একটু কিছু দেখলেই আমাদের জানাবি। ওর বাবা সপ্তাহে একদিন দুদিন যাবে এছাড়া তো আর কোন উপায় নেই কত স্বপ্ন ছিল কেমন যেন সব হয়ে গেল।‘’
পড়ুয়ার বাবা দেবব্রত মণ্ডল বলেন “ও চান্স পাওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এই ঘটনা দেখে আমরা একেবারেই বিচলিত। ও র মা আমি ওকে বলেছি যাদবপুরে যেতে হবে না। অন্য কোথাও ভাব। যাদবপুরের বিকল্প পাব কোথায়। আবার ওর একটা ভবিষ্যৎ আছে। আমার যা ক্ষমতা তাতে ওকে হোস্টেলে রেখেই পড়াতে হবে।। এখন ঠিক করেছি গেলে যাক।। আমরা আতঙ্কে থাকব।’’
বলাগড়ের স্বপ্নদীপের মতো, চোখেমুখে আতঙ্ক উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার আবু সামা ও তাঁর পরিবারেরও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া আবু সামা।উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি।পলিটিকাল সায়েন্স নিয়ে ভর্তি হন যাদবপুরে।যেদিন ছাত্রমৃত্য়ুর ঘটনা ঘটে, তার পরদিনই হস্টেল ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন আবু সামা। পড়াশুনা করতে ছেলেকে ফিরতে হবে যাদবপুরের হস্টেলে। রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছে আবু সামার পরিবারও। যাদবপুরের হস্টেলে পড়ুয়ার মৃত্যুতে খালি হয়ে গেছে নদিয়ার মায়ের কোল। আর রাজ্যে এমনই বহু পড়ুয়ার স্বপ্নকে এক লহমায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে খাদের কিনারায়।