জলপাইগুড়ি: প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে উপচে পড়ছে নদীর পাড়। সেই সময়ই বিপত্তি। আচমকা ধেয়ে এল হড়পা বান (Jalpaiguri Flash Flood)। তার পর মুহূর্ত মাত্র, চোখের সামনে তলিয়ে গেলেন বেশ কয়েক জন। দশমীর রাতে জলপাইগুড়ির মাল নদীতে বিসর্জনের সময়কার এই ছবি এবং ভিডিও উঠে আসায় শিউড়ে উঠছেন সকলে (Flash Flood Deaths)। তা নিয়ে পুলিশি ব্যর্থতাকে যেমন দায়ী করা হচ্ছে, তেমনই প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। প্রশাসনের তরফে যদিও জানানো হয়েছে, লাগাতার মাইকিং করা হয়েছিল। সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল সকলকে। তা সত্ত্বেও নির্দেশ মানেননি কেউ কেউ। তাতেই এই বিপত্তি। সেই নিয়ে আকচাআকচির মধ্যেই এবিপি আনন্দে মুখ খুললেন বিশেষজ্ঞরা (River Experts)।


জলপাইগুড়ির ঘটনা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা!


হড়পা বানে নদীর জলস্তর আচমকা অনেকটা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কম সময়ের মধ্যে, এত দ্রুত গতিতে জলের স্রোত আসে যে, তার থেকে বাঁচা কঠিন। তাই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় নদী বিশেষজ্ঞ স্নেহমঞ্জু বসুর কাছে। তিনি বলেন, ‘‘হড়পা বান আসার সময় খুব একটা সুযোগ পাওয়া যায় না। এটা ঠিকই। বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি হলে, সেই সময় অন্তত লোয়ার কোর্সে যে সব জায়গা থাকে, সেই সব জায়গায় ড্রাই বেড থাকলেও, একটু সতর্ক হয়ে থাকা উচিত যে, রিভার বেডে হঠাৎ করে জল বেড়ে যেতে পারে। সেই কারণে একটু সতর্ক থাকা দরকার।’’


তাঁদের তরফে সব ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তরফে সঠিক ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। পুলিশ এবং সিভিলের তরফে এসডিও, এসডিপি, সিভিল ডিফেন্সের টিম, স্বেচ্ছাসেবক, মেডিক্যাল টিম ছিল।’’ কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বুধবারের হড়পা বানে পরিস্থিতি আরও একটু জটিল হয়ে ওঠে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে,  সেখানে নদীর গতিপথের একদিকে বোল্ডার ফেলা অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল, যাতে যে পাড়ে বিসর্জন হচ্ছিল, সে দিকে জলস্তর বেশি থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, হড়পা বান এসে বোল্ডারে ধাক্কা খাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।


আরও পড়ুন: Malda News: হড়পা বানে মৃত্যুর ঘটনার একাধিক প্রশ্ন, প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে বিক্ষোভ স্থানীয়দের


বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে দাবি, দুর্ঘটনার মোকাবিলায় বিসর্জনের সময় ঘাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী প্রস্তুত রাখতে হয়। তাছাড়াও রাখতে হয় নৌকা, লাইফ জ্যাকেট। জোয়ার-ভাটার সময় অনবরত ঘোষণা করতে হয়। মাইকে প্রচার করতে হয়। নির্দিষ্ট গাইডলাইন জানিয়ে টাঙাতে হয় ব্যানার। কিন্তু বুধবার মাল নদীতে বিসর্জনের সময় মোতায়েন থাকা সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের কর্মী কম ছিল, যেহেতু সব জায়গায় বিসর্জন হচ্ছে, তাই ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল এবং এখানে কর্মীর অভাব।’’


পুলিশ এবং প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলছেন বিরোধীরা


এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কয়েক হাজার মানুষের ভিড় সামাল দিতে মাত্র ৮ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মী কেন? নৌকা, সরঞ্জাম না রেখে সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের হাতে শুধু দড়ি কেন? আগেকার হড়পা বানের কথা মাথায় রেখে প্রশাসন সতর্ক হয়নি কেন? উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস সত্ত্বেও কেন নেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি? নদীখাতে কেন রাখা হয়নি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা? কিন্তু পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ‘‘ভাসান শুরুর সময় হাঁটুর নীচে জল ছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ বান আসে। কিছু লোক ভেসে যান। সেই সময় ঘাটে অন্তত ১ হাজার লোক ছিলেন। যারা ভেসে যান, স্পটেই ২০-২৫-জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’’ জলপাইগুড়ির এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নবান্ন। কিন্তু সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও চলছে পাশাপাশি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ এ নিয়ে সরাসরি বিজেপি এবং বিরোধী শিবিরকে নিশানা করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যাঁরা বলছেন পুলিশ কেন তাঁদের আটকাল না, আটকাতে গেলে, তাঁরাই বলতেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’  সবমিলিয়ে তুঙ্গে তরজা।