রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি : চার মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রাম। ভেঙে পড়েছে কয়েকশো বাড়ি। প্রচুর গাছ উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। চার মিনিটের ঝড়ে গোটা এলাকা একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে যেন। এলাকা জুড়ে এখন শুধুই হাহাকারের ছবি। কারও হারিয়ে গিয়েছে ছাদ, কারও উড়ে গিয়েছে আস্ত একটা বাড়িই। কারও আবার শেষ সহায় সম্বলটুকুও কেড়ে নিয়েছে কয়েকমিনিটের তাণ্ডব। 


জলপাইগুড়ির বার্নিশ গ্রামে বাড়ি রাজ্য পুলিশের কর্মী কামিনী সেনের। ছুটি কাটিয়ে সোমবারই কর্মস্থল দার্জিলিঙে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। রবিবার দুপুরে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন ওই পুলিশ কর্মী। ঝড়ের তাণ্ডবে বারান্দার সিলিংটাই ভয়ঙ্কর ভাবে ভেঙে পড়ে। অল্পের জন্য বড় বিপদ এড়ান তিনি। কিন্তু ফেটে গিয়েছে তাঁর মাথা। ভেঙেছে তাঁর ডান হাতও । চোট পেয়েছেন পায়েও। এখনও আতঙ্কেই রয়েছেন পুলিশ কর্মী কামিনী সেন। 


ওই বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতেরই শিশুয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা কলেন রায়। তাঁর অভিজ্ঞতাও কিছু কম ভয়াবহ নয়। মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। তাই বাড়িতেই রাখা ছিল সোনার গয়না, টাকাপয়সা। কলেন রায়ের দাবি, ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গেছে, জিনিসপত্র সমেত আস্ত আলমারিটাই। কষ্টার্জিত সঞ্চয়টুকুও হারিয়ে গিয়েছে ঝড়ের  সঙ্গে। টাকা পয়সা, গয়নাগাটি, কিছুই আর নেই।  মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ময়নাগুড়ির এই বাসিন্দার। মেয়ের বিয়ের ভাবনা-চিন্তাও এখন বিশ বাঁও জলে।   


রবিবার রাতেই ঝড়ে-বিধ্বস্ত জলপাইগুড়িতে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রথমে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান তিনি। এরপর বার্নিশ গ্রামে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি । ঝড়ের তাণ্ডবে এই বার্নিশ গ্রামেরই ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর রাত ২টো নাগাদ চালসার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।   


অন্যদিকে রাত পেরোতেই জলপাইগুড়িতে পৌঁছেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখার পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি আছে তাঁর। রাজভবনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পিস রুম, খোলা হয়েছে জরুরি সেল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে রাজভবন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সাহায্যের জন্য বলা হয়েছে। 


আরও পড়ুন :  এবার কোন ইস্যু নির্ণয় করবে পাহাড়ের ভোট-ভাগ্য? ১৫ বছরের জয়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে BJP?