কলকাতা: জন্মাষ্টমী (Janmashtami) মানেই মহা সমারোহে শ্রীকৃষ্ণের পুজো। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ও রোহিণী নক্ষত্র যোগে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। বলা হয় ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রী কৃষ্ণ, কারাগারে জন্ম নেন মাতা দেবকীর গর্ভে ৷ সেই তিথি মেনে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। বাংলা তো বটেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই জন্মাষ্টমীর ব্রত পালন করা হয়ে থাকে।


বৈচিত্রের এই দেশে জন্মাষ্টমী পালনের ক্ষেত্রেও নানা নিয়মের কথা জানা যায়। স্থানবিশেষে বদলে যায় জন্মাষ্টমী পালনের রেওয়াজ। এই বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রীতির বৈচিত্র ছড়িয়ে রয়েছে। গান-বাজনা থেকে পুজোর নিয়ম-বৈচিত্রের মেলবন্ধনেই জন্মাষ্টমীর আয়োজন করা হয় বঙ্গের নানা জেলায়। জানা যায়, রাঢ় বঙ্গে জন্মাষ্টমীকে বলা হয়ে থাকে ঠাকুর জনম। শুধু তাই নয়, বৈষ্ণব মতের থেকে রাঢ় বঙ্গে ঠাকুর জনম পালনের রীতির পার্থক্যও রয়েছে অনেক। দক্ষিণবঙ্গে জন্মাষ্টমী পালনে যে ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে রাঢ়বঙ্গে তা দেওয়া হয় না। আবার উপবাস ভাঙার পরেও বাধ্যতামূলক নয় নিরামিষ খাওয়া।


"ঠাকুর জনম নিলা ভাদরে,জোনাইর গাদরে..."অর্থাৎ ভুট্টার ওপরের খোসাটা এক জায়গায় জমা করে রাখা হয়েছে, কারাগারে সেটাই নরম বিছানা তুল্য, তাই সেখানেই  ভূমিষ্ঠ হলেন শ্রীকৃষ্ণের। ঠাকুর জনম পালনে এই গান গাওয়ার রীতি বহু বছরের। তালের বড়া, মালপোয়া থেকে পায়েস- পুজোতে এই হরেক রকম ভোগ দেওয়া হয়ে থাকে। মূলত যা দেখা যায় দক্ষিণবঙ্গেই। বৈষ্ণব মত অনুযায়ী এই নিয়ম মেনেই পালিত হয় জন্মাষ্টমী। তবে পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, রাঁচির দক্ষিণাঞ্চল, বাঁকুড়া এই অঞ্চলে ভোগে থাকে না তাল। বরং তার বদলে নিবেদন করা হয় ভুট্টা। কারণ হিসেবে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে তালের দেখা মিললেও তা তুলনায় অনেক তালের বড়া বা মালপোয়া নিবেদন করার রেওয়াজ নেই। এই সময় পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় ক্ষেত থেকে ভুট্টা তোলা হয়। তাই কৃষ্ণের ভোগে ফল মিষ্টির পাশাপাশি রাখা হয় ভুট্টাও।


পুরুলিয়া (Purulia) নিয়ে গবেষণা করছেন অশোক ঘোষাল। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘রাঢ়বঙ্গে জলের বড় সঙ্কট। বৃষ্টি হলেই চাষ, না হলে নেই। কৃষ্ণকে একমাত্র ভগবান বলে ধরা হয় যিনি চাষের ক্ষেত্রে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন। ষষ্ঠ কোণ বা অষ্ট কোণ বিশিষ্ট হরি মন্দিরে কৃষ্ণের পুজো করা হয়। শিব, দুর্গার চেয়ে বেশি কৃষ্ণপুজোর প্রচলন এই অঞ্চলগুলিতে। বৈষ্ণবমতে যাঁরা পুজো করেন, অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গে তাঁদের মধ্যে অনেকের বাড়িতেই শ্রীকৃ্ষ্ণকে তালের বড়া নিবেদন না করে তাল খাওয়া হয় না। আর পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, রাঁচির দক্ষিণাঞ্চল, বাঁকুড়ার মতো এলাকায় তাল সেখানে পাওয়া গেলেও, তালের বড়া ভোগ দেওয়ার তেমন রীতির প্রচলন নেই। ফলে ভোগের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছেই।’


আরও পড়ুন: Janmasthami 2021: দেশে বাড়ছে করোনা, জন্মাষ্টমীতে চাকলার লোকনাথ ধামেও হচ্ছে না জন্মাষ্টমী উত্সব


চলতি বছর, ৩০ অগাস্ট, রাত ১১টা ৫৯ মিনিট থেকে ১২টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত পুজোর শুভক্ষণ। ৩০ অগাস্ট রাত ১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্তই রোহিণী নক্ষত্র থাকবে। এবছরও রাঢ়বঙ্গে ঠাকুর জনম পালনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা তেজুরাম মোদক বলেন, ‘এখানে জন্মাষ্টমী নয়, বলা হয় ঠাকুর জনম। ঠাকুর জনম নিলা ভাদরে গানের সুরেই শ্রীকৃষ্ণের পুজো করা হয়ে থাকে। বৈষ্ণব মত অনুযায়ী, উপোস ভাঙার পরেও নিরামিষ খেতে হয়। রাঢ়বঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো জায়গায় নিয়মটা একটু আলাদা। সাধারণত শুধু এক পদ দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ভক্তেরা জন্মাষ্টমীর দিন উপবাস রাখেন ও সংকল্প করেন। কিন্তু উপোস ভাঙার পর ওই দিন নিরামিষ খেতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।’


মাঝে আর মাত্র একটা দিন। পরবের অপেক্ষায় রাঢ় বঙ্গের বাসিন্দারা। তেজুরাম মোদক জানাচ্ছেন, ‘ঝুলন, নতুন জামা, ময়ূরের পালক লাগানো মুকুট, পাঞ্চজন্য শঙ্খ, বাঁশি, সুদর্শন চক্র, ফুলের মালা, হাতের বালা তৈরি রাখা হয়েছে শ্রীকৃ্ষ্ণের জন্য। এরইসঙ্গে ঠাকুর জনম ব্রত পালনের জন্য উপকরণ হিসেবে ফুল, আতপ চাল, ফলের নৈবেদ্য, ফুল, তুলসীপাতা, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুড়ি, পাট, বালি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, মধু পর্কের বাটি, আসন-অঙ্গুরীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’


আরও পড়ুন: Janmashtami 2021: বাড়িতেই খুব সহজে তৈরি করুন জন্মাষ্টমী ভোগের লাড্ডু