রঞ্জিৎ সাউ, কলকাতা: ‘কলকাতায় সংগঠন দুর্বল। জানতাম এখানে ফল ভাল হবে না।’ কলকাতা পুরসভা ভোটে বিজেপি-র খারাপ ফল সম্পর্কে মন্তব্য বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের।
দিলীপ আরও বলেন, ‘পুরভোটে বিধানসভার থেকে বেশি ভোট পড়েছে। আজগুবি ব্যাপার। তা বলে বাকি ১১১টা পুরসভায় কলকাতার মতো ভোট হবে, ভাববেন না। জেলাতে আমাদের সংগঠন শক্তিশালী।’
২০১০ সালের কলকাতা পুরভোটে তিনটি আসনে জিতেছিল বিজেপি। এক দশক পর তারা আবার ফিরে গেল সেই জায়গায়। কিন্তু, এর কারণ কী? তাহলে মোদি-মমতা আঁতাঁতের অভিযোগের জেরেই, কি তৃণমূল-বিরোধী ভোট সিপিএমের দিকে ফিরছে? তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।
স্বাধীনতার পর প্রথমবার বঙ্গ বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেছে বাম-কংগ্রেস। তবে এবারের কলকাতা পুরভোটে কার্যত ফিনিক্সের মতো ফিরে এল তারা। উল্টোদিকে বিজেপি ফিরে গেল এক দশক পিছনে। মোদি-মমতা গোপন আঁতাঁতের বাম-কংগ্রেসের অভিযোগই কি ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলল? এই ‘বিজেমূল’ তত্ত্বের কারণেই কি বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে তৃণমূল বিরোধী ভোট বামেদের দিকে ফিরতে শুরু করল? ২০১০ সালে কলকাতা পুরভোটে বিজেপি তিনটি আসন জিতেছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে কলকাতা পুর-এলাকার ২২টা আসনে বিজেপি এগিয়ে ছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখেও কলকাতা পুরসভার ১২টি আসনে তাদের লিড ছিল। কিন্তু, সাতমাস পর কলকাতা পুরভোটে তারা জিতল মাত্র তিনটি আসনে। অর্থাৎ সেই এক দশক পিছনে।
কিন্তু, যে বিজেপি গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে প্রচারে ঝড় তুলেছিল। বাম-কংগ্রেসকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, তাদের ভোট মাত্র মাস সাতেকের মধ্যে এতটা কমে গেল কী করে? কেন ভোট শতাংশের নিরিখে বামেদের পেছনে চলে গেল বিজেপি? বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, কোথাও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রসকে ফের ধাক্কা দেওয়ার ছক কষতে গিয়ে, আদতে বঙ্গ বিজেপিকেই ধাক্কা দিল না তো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব?
কারণ, বঙ্গ বিজেপি যখন রাজ্যে লাগাতার তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক খুন-অত্যাচার-সন্ত্রাসের অভিযোগ করছে, তখন সম্প্রতি দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ হয়। প্রধানমন্ত্রীকে বাংলায় শিল্প সম্মেলনে আসার আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রী। কার্যত নজিরবিহীনভাবে প্রধানমন্ত্রীও সঙ্গে সঙ্গে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলায় আসতে রাজিও হয়ে গেছেন বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই মধ্যে তৃণমূলও লাগাতার রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসকে ভাঙাতে শুরু করেছে। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর এবার দিল্লিতে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকও করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই পরিস্থিতিতে বাম-কংগ্রেস লাগাতার দাবি করতে শুরু করে, লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে মোদির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে আঁতাঁত হয়ে গেছে। তাই তৃণমূলও বিজেপির সুবিধা করে দিতে কংগ্রস ভাঙাতে শুরু করেছে। উল্টোদিকে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিও চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্তে ফের ঢিলেমি দিচ্ছে। কোথাও কি এই আঁতাঁতের তত্ত্বই তৃণমূল বিরোধী ভোটারদের একাংশের মনে গেঁথে গেছে? তাই কি তারা বিজেপির থেকে সরে এসে কট্টর তৃণমূল বিরোধী সিপিএমের দিকেই ফের ঝুঁকতে শুরু করল?
যদিও, রাজ্য বিজেপি দাবি করছে, আসলে বামেদের উঠতে সাহায্য করছে তৃণমূলই। আগামী দিনে বঙ্গ বিজেপি কোন পথে এই ধাক্কা সামাল দেয়, তার উত্তর সময়ই দেবে।