কলকাতা : স্বামী স্ত্রীর বাক্যালাপে এমন কত কথাই তো আসে। কে আর মনে রাখে। স্বামী তাপসকে একদিন ইন্দ্রাণী বলেছিলেন, মরে গেলে পারলে আমার একটা মূর্তি বানিও। 



স্ত্রীর মৃত্যুর কথা কেই বা ভাবেন। ছায়ার মতো লেগে থাকা মানুষটি হঠাৎ সরে গেলে কী হবে, তাঁর জীবদ্দশায় কারই বা মাথায় আসে। তাপসও ভাবেননি। কিন্তু করোনা যখন প্রিয় মানুষটিকে তাঁর পাশ থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল, তখন এই কথাটাই মনে পড়ে গেল। 

শাহজাহান মুমতাজের প্রেমকাহিনি তো বিশ্বনন্দিত। কিন্তু এ যুগেও এমনটা ঘটে। তাজমহল নয়, নিজের স্ত্রীর স্মরণে মূর্তি গড়ে ফেললেন তাপস। বিশেষ অর্ডার দিয়ে গড়িয়ে আনলেন স্ত্রীর সিলিকনের মূর্তি। জলজ্যান্ত জীবন্ত, হাস্যমুখে বসে থাকা যেন ডাকলেই সাড়া পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন :


আজও শীতের কাঁপুনি অব্যাহত, কবে বাড়বে তাপমাত্রা ?


অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি তাপস। অনেকদিন আগে একবার স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন মায়াপুরের ইস্কন মন্দরে। সেখানে প্রভুপাদের মৃর্তি দেখে আবেগভরা কণ্ঠে ইন্দ্রাণী বলেছিলেন, আমি আগে গেলে আমার এমন একটা মূর্তি গড়বে ? সে সময় তো সে-কথার কোনও মূল্য ছিল না। কিন্তু স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে বারবার তাপসের মনে পড়ত ইন্দ্রাণী এই কথাটি। 


২০২১ সালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান  দমদমের বাসিন্দা তাপস সান্ডিল্যর স্ত্রী ইন্দ্রাণী। তারপরই শিল্পীর কাছে আর্জি নিয়ে পৌঁছান তাপস। তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন তাঁরা। আজকের দিনেও এমনটা হয় ? অবিকল স্ত্রীর চেহারাটি মূর্তির মধ্যে চেয়েছিলেন বলে শিল্পীকে দিয়ে গিয়েছিলেন মাপের সায়া-ব্লাউজ। যাতে নিখুঁত গড়ন হয়। অবশেষে হয় ইচ্ছেপূরণ। 


ইন্দ্রাণীর মূর্তি দেখলে ক্ষণিকের জন্য মনে হবে যেন জলজ্যান্ত মানুষটিই বসে রয়েছেন। এভাবেই মরণের পরে প্রাণপ্রিয় মানুষটিকে ধরে রেখেছেন নিজের কাছে। ' নাহি জানি, কেহ নাহি জানে / তব সুর বাজে মোর গানে / কবির অন্তরে তুমি কবি/ নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি॥