কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সত্যজিৎ বৈদ্য ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: হেরিটেজ ভবনের (Jorasanko Heritage Bhavan) একাংশ ভাঙা নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক। জল গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) পর্যন্ত। এরই মধ্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ঢুঁ মেরেছিল এবিপি আনন্দ। তৃণমূল (TMC) শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসে, কবিগুরুর (Rabindranath Tagore) ছবির সঙ্গেই দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) ছবি। যা নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।
রবীন্দ্রনাথের ছবির সঙ্গেই দেওয়ালে ঝুলছে মমতা-অভিষেকের ছবি
মাঝে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি। তার একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্য দিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-এই হল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ক্যাম্পাসে, তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিস।
হেরিটেজ ভবন ভেঙে এই কার্যালয় তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে, মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। যার প্রেক্ষিতে হেরিটেজ ভবন ভাঙায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের এই নির্দেশের পর এবিপি আনন্দ পৌঁছয় কবিগুরুর জন্মভিটেয়।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, বাঙালি রেনেসাঁর আতুরঘর, সেই সঙ্গে আরও একজনের আতুরঘর আমাদের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথের। সেই হেরিটেজই জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। শুধু জবরদখলের অভিযোগই নয়, হেরিটেজ ভবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে, বদলে দেওয়া হয়েছে ঘরের রংও। দরজা-জানালায় পড়েছে সবুজের প্রলেপ।
তবে এ নিয়ে বিতর্ক কানে তুলতে নারাজ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির সভাপতি সুবোধ দত্ত চৌধুরী। তিনি বলেন, "প্রথমত কোনওরকম ঘর দখল করিনি। এটা গতদিনে যারা এই ইউনিয়ন করতেন, তারা ব্যবহার করতেন, বাম সরকার আসার পর তারা ব্যবহার করতেন। এখন আমরা করছি। আইন আইনের পথে চলবে, তাই মন্তব্য করব না। তবে যা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। বলা হচ্ছে আমরা ভেঙে ফেলেছি, সেটা হয়নি।"
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, "অভ্যন্তরীণভাবে কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপের চেষ্টা করেছিলেন, যে কোনও কারণেই হোক কিছু হয়নি। কিন্তু এখন বিষয়টি বিচারাধীন, সুতরাং এটা নিয়ে নতুন করে মন্তব্য করার অবকাশ নেই। আমরা মহামান্য আদালতের নির্দেশের উপর নির্ভর করব, অন্তর্বর্তী নির্দেশের কপি হাতে পাইনি। পেলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে এবং আইন আইনের পথে চলবে।"
হাইকোর্টে মামলাকারী স্বদেশ মজুমদার দাবি করেছেন, এই ঘরেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমবার সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলন। আর, আজ সেখানেই কবিগুরুর ছবির সঙ্গে জায়গা পেয়েছে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর ছবি।
গোটা ঘটনায় সরগরম বঙ্গ রাজনীতিও। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, "ওঁদের সম্মতিতে ঠাকুরবাড়িতে এটা হয়েছে! জানার পরও বলেননি, যে ছবিটা তুলে নিতে!"
এর পাল্টা তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের যুক্তি, "মার্কস স্ট্যালিনের পাশে জ্যোতিবাবুর ছবি দেখেছি। শ্যামাপ্রসাদের পাশে কেন্দ্র বা রাজ্য বিজেপি নেতার ছবি দেখেছি। বিষয়টা হল রবীন্দ্রনাথকে অসম্মান করা হয়েছে কি হয়নি। যারা বলছেন হয়েছে, তারা সেটাকে ব্যবহার করছেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের মনে শয়নে স্বপনে।"
রবীন্দ্রনাথকে অসম্মান করা হয়েছে, দাবি বিরোধীদের
তবে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার কথায়, "এর পর তো দেখা যাবে, মমতা অভিষেকের ছবি থাকবে, রবীন্দ্রনাথ গায়েব হয়ে যাবে। এটা খুবই লজ্জার।" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি নিয়ে বাঙালির আবেগ আজও অটুট। কিন্তু, এহেন স্মৃতিবজড়িত স্থান ঘিরেও এখন তপ্ত রাজনীতি।